ksrm-ads

২৫ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

ফিফা বর্ষসেরার লড়াইয়ে মেসি-বেনজেমা-এমবাপে

ক্রীড়া ডেস্ক »

অসাধারণ পারফরম্যান্সে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতানো লিওনেল মেসি আরও একবার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়ার পথে এগিয়ে আছেন। ২০২২ সালের ‘দা বেস্ট ফিফা মেন’স প্লেয়ার অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য তার লড়াই করিম বেনজেমা ও কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে।

২০২১ সালে ৮ অগাস্ট থেকে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের পারফরম্যান্স বিবেচনায় প্রথমে ১৪ জন খেলোয়াড় মনোনীত করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্য থেকে পুরুষ ফুটবল জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়ক, সাংবাদিক এবং ফিফার ওয়েবসাইটে দেওয়া ফুটবলপ্রেমীদের ভোটে তিন ফাইনালিস্টের নাম শুক্রবার ঘোষণা করে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা।

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারিতে প্যারিসে ‘দা বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠানে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।

লিওনেল মেসি
স্বপ্ন পূরণের কাতার বিশ্বকাপে দলকে বিশ্বসেরা করার পথে একের পর এক যে জাদুকরী সব পারফরম্যান্স উপহার দেন মেসি, তারপর তার এই তালিকায় জায়গা পাওয়াটা নিশ্চিতই ছিল।

দীর্ঘ দিনের ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর নতুন ঠিকানায় প্রথম মৌসুমটা তার খুব ভালো না কাটলেও স্বরূপে ফিরতে খুব বেশি সময়ও নেননি মেসি। পিএসজির জার্সিতে দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই নিজেকে আবার মেলে ধরতে শুরু করেন তিনি।

কঠিন্ সময়টা পার করে দেওয়ার পর থেকে উপহার দিচ্ছেন গোল বা অ্যাসিস্টের মাধ্যমে একের পর এক ব্যবধান গড়ে দেওয়া পারফরম্যান্স। আর জাতীয় দলে হয়ে সারা বছরই দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন সাতটি ব্যালন দ’র জয়ী। যার সেরাটা দেখা মেলে কাতারে, বিশ্ব সেরার মঞ্চে।

বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর ম্যাচেই গোলের দেখা পান মেসি। সৌদি আরবের বিপক্ষে যদিও ওই ম্যাচে অঘটনের শিকার হয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্নই শেষ হওয়ার শঙ্কা জাগে আর্জেন্টিনার। আর সেখান থেকেই মেসির স্বপ্নের পথে যাত্রার শুরু।

পরের ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষেও অনেকটা সময় আর্জেন্টিনার পারফরম্যান্স ছিল ভীষণ সাদামাটা। দুর্দান্ত এক গোলে দলকে পথ দেখান মেসি। পুরো বিশ্বকাপে একমাত্র গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষেই জালের দেখা পাননি তিনি।

ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে করেন জোড়া গোল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ গোল ও সর্বোচ্চ ৩টি অ্যাসিস্ট করেন মেসি। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন মেসি।

কিলিয়ান এমবাপে
গেল ডিসেম্বরেই তার পূর্ণ হয়েছে ২৪ বছর। এরই মধ্যে তার অর্জনের ঝুলিতে আছে অসংখ্য ট্রফি, সঙ্গে একটি বিশ্বকাপও। কাতারের বিশ্ব মঞ্চে মেসির মতো এমবাপেও ছিলেন অবিশ্বাস্য ফর্মে। আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিলেন তিনি ও তার দল ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত সেটা না হলেও, নিজেকে ঠিকই সেরার কাতারে তুলে নেন এমবাপে।

২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া এমবাপে কাতারে ছিলেন আরও পরিণত, ভয়ঙ্কর।

ফাইনালে প্রথমার্ধেই দুই গোল খেয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ফ্রান্স। এরপর বলা যায় একক নৈপুণ্যেই দলকে পথে ফেরান তিনি, তার অসাধারণ এক হ্যাটট্রিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব কাছেও পৌঁছে যায় ফরাসিরা। টাইব্রেকারের স্নায়ুচাপে শেষ পর্যন্ত হার মানলেও এমবাপে ছিলেন অনন্য।

টুর্নামেন্টে আট গোল করে জিতে নেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট। এছাড়া বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৫৬ বছর পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি গড়েন তিনি।

গত মৌসুমে পিএসজির লিগ ওয়ান জয়েও বড় ভূমিকা ছিল এমবাপের। আসরে সর্বোচ্চ ২৮ গোল করার পাশাপাশি সর্বোচ্চ ১৭টি অ্যাসিস্টও করেন তিনি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০২১-২২ মৌসুমে পিএসজির হয়ে ৪৬ ম্যাচ খেলে ৩৯ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে তিনি করান ২৬টি।

করিম বেনজেমা
দলের সঙ্গে কাতারে পা রেখেও ভাগ্যের ফেরে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি বেনজেমা। চোটের আঘাতে ছিটকে পড়েন তিনি। তবে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গত মৌসুমে তার পারফরম্যান্স এতটাই ঝলমলে ছিল যে, বিশ্বকাপে না খেলেই সেরার কাতারে জায়গা করে নিয়েছেন এই ফরাসি তারকা।

২০২১-২২ মৌসুমের শুরুতে কোচ কার্লো আনচেলত্তির দল রিয়ালকে নিয়ে বাজি ধরার লোক খুব বেশি ছিল না। কিন্তু মাঠের লড়াই শুরু হতেই পাল্টে যেতে থাকে সবার ভাবনা। আর এর মূল কারণ ছিলেন বেনজেমা।

পুরো মৌসুমেই দারুণ ধারাবাহিক ছিলেন তিনি। সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। ইউরোপ সেরার মঞ্চে দলকে রেকর্ড ১৪তম শিরোপা জেতাতে সর্বোচ্চ ১৫টি গোল করেন বেনজেমা। এর মধ্যে ১০টিই করেন নকআউট পর্বে। একের পর এক ম্যাচে রিয়ালের রূপকথার প্রত্যাবর্তনের নায়ক তিনি।

বিশেষ করে শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার-ফাইনালে ফরাসি তারকার হ্যাটট্রিকেই পিএসজি ও চেলসিকে বিদায় করে দেয় মাদ্রিদের দলটি। সেমি-ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে লড়াইয়ের ভাগ্য নির্ধারণী গোলটিও তারই করা।

গতবার রিয়ালের লা লিগা জয়েও বড় অবদান রেখে বেনজেমা করেন আসরের সর্বোচ্চ ২৭ গোল। এছাড়া ক্লাবের স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের পথে তিনি একবার করে জালের দেখা পান সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে। মাদ্রিদের দলটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৬ ম্যাচে করেন ৪৪ গোল।

চলতি মৌসুমে কয়েক দফার চোটে ক্লাবের হয়েও কয়েকও ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। তাতে হয়েছে ছন্দপতনও। এর মাঝেও লা লিগায় ১২ ম্যাচ খেলে তিনি গোল করেছেন ৯টি।

ক্লাবের হয়ে অসাধারণ ওই পারফরম্যান্সে ২০২২ সালের ব্যালন দ’র জিতে নিয়েছেন বেনজেমা। ফিফার সেরার লড়াইয়ে কতটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন ৩৫ বছর বয়সী তারকা, সেটাই দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন