ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে দ্বীপে আটকা পড়া ৪ শতাধিক পর্যটক দুইদিন পর টেকনাফ ফিরেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা হতে বৈরী আবহাওয়া কেটে যাবার পর এ নৌ-পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শনিবার আবার শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে সেন্টমার্টিন হতে জাহাজে উঠে সন্ধ্যায় টেকনাফ দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছান পর্যটকরা।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে কেয়ারি সিন্দবাদ ও বারো আউলিয়া নামের দু’টি পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এবং সন্ধ্যায় পর্যটক নিয়ে ফিরে আসে বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী।
ইউএনও বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাব কেটে যাওয়ায় সমুদ্র বন্দর থেকে সর্তক সংকেত প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। সেই মতে শনিবার সকাল ১০টার দিকে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে কেয়ারি সিন্দবাদ ও বারো আউলিয়া নামের দু’টি পর্যটক বাহী জাহাজ সেন্টমার্টিন উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জাহাজ দু’টি দুপুরের দিকে দ্বীপে পৌছায়। পরবর্তীতে বিকাল ৪টার দিকে দ্বীপ আটকা পড়া পর্যটকদের নিয়ে রওয়ানা দিয়ে সন্ধ্যার সময় দমদমিয়া জেটিঘাট ফিরে আসে।
এর আগে ঘুর্ণিঝড় মিধিলির কারনে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে বৃহস্পতিবার থেকে নৌপথে সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফ অঞ্চলের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আবহাওয়ার সতর্ক সংকেতের বার্তায় বৃহস্পতিবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। বুধবার দমদমিয়া জেটিঘাট দিয়ে সকালে কেয়ারি সিন্দাবাদে ১৩২ জন, আটল্যান্টিকে ৮৯ ও এমভি বার আউলিয়া করে ২৯৮ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে যান। পরে জাহাজে করে বেলা তিনটায় তিন শতাধিক পর্যটক ফেরত আসলেও অন্যরা দ্বীপে রয়ে যান। আগের দিন মঙ্গলবার বেড়াতে গিয়ে রাত যাপনের জন্য ছিলেন দু’শতাধিক পর্যটক। ফলে দ্বীপে চার শতাধিক পর্যটক ঘূর্ণিঝড় মিধিলি চলাকালে দ্বীপে আটকা পড়ে। শনিবার থেকে সমুদ্র বন্দর থেকে সর্তক সংকেত প্রত্যাহার হলে সকাল ১০টার দিকে দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে ৬২ জন পর্যটক নিয়ে কেয়ারি সিন্দবাদ ও কোন পর্যটক ছাড়া বারো আউলিয়া জাহাজ দুটি সেন্টমাটিন উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এ জাহাজ দুটি দ্বীপে আটকা পড়া ৪ শতাধিক পর্যটক নিয়ে সন্ধ্যার দিকে দমদমিয়া জেটিঘাট ফিরে আসে।
দুদিন অতিরিক্ত থেকে স্থলে ফেরা পর্যটক দম্পতি ফেনী সদরের ইমতিয়াজ সুমেল ও রিয়া ইমতিয়াজ বলেন, মঙ্গলবার থেকে গিয়ে আমাদের বৃহস্পতিবার টেকনাফ ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাহাজ বন্ধ হওয়ার কথা জেনে প্রথমে শংকিত হয়ে পড়ি। কিন্তু সকাল-বিকাল ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষে যোগাযোগ রেখে অভয় দেয়ার পর দূর্যোগে কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। তবে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কথা বলে স্বজনরা বার বার যোগাযোগ করেছে চিন্তা করেছে। তাদেরকে আমরা ভালো থাকার কথা বলে অভয় দিয়েছি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে আবহাওয়া বৈরী হলে সতর্ক সংকেত জারির পর বৃহস্পতিবার থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। দ্বীপে অবস্থান করা পর্যটকদের খোঁজ খবর রাখা হয়েছিল নিয়মিত। দুপুরে টেকনাফ থেকে দুটি জাহাজ আসে। বিকেলে সব যাত্রী নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে জাহাজ দু’টি ছেড়ে যায় বলে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান।