১২ জুলাই ২০২৫

ফিল্মি স্টাইলে ব্যবসায়ী অপহরণ, প্রশাসনিক চাপে মুক্তি

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

নগরীর হালিশহর থানা এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে প্রকাশ্যে পরিবারের সামনে থেকে ফিল্মি স্টাইলে দিন দুপুরে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করার পর মধ্যরাতে নগরীর জিইসি মোড়ে রেখে যাওয়া হয় মুহাম্মদ সাইফুল (৪০) নামের এক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীকে।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় নগরীর হালিশহর এলাকার বউ বাজারের দুলহান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় অপহৃত ব্যবসায়ী মুহাম্মদ সাইফুলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বাদী হয়ে হালিশহর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করলে প্রশাসনিক চাপে শুক্রবার পৌনে তিনটার দিকে তাকে চোখ বেধে জিইসি মোড়ে রেখে যায় অপহরনকারীরা ।

অপহরণের পর যখন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের খোঁজ পাওয়া পাচ্ছিল না, তখন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে প্রশাসনের অব্যাহত চাপে অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়ে যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার লোকজন মোটরসাইকেলযোগে ওই ব্যবসায়ীকে নিয়ে এসে জিইসি মোড়ে রেখে যান বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে।

মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের অধিবাসী সাইফুল ইসলামের পরিবার পরিজন নিয়ে নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে বসবাস করতেন।

জানা গেছে, অপহরণের ঘটনা গণমাধ্যম প্রকাশ ও জানাজানি হলে শুক্রবার মধ্যরাতে অপহরণের দায়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের এক নেতার বাসায় আশ্রয় নেন। সেখানে নগর যুবলীগের একাধিক শীর্ষ নেতাও উপস্থিত হন। খবর পেয়ে নগর আওয়ামী লীগের ওই নেতার বাসার সামনে পুলিশের চারটি গাড়ি অবস্থান নিয়ে চাপ সৃষ্টি করে। এরপরই মূলত ব্যবসায়ী সাইফুলকে মুক্তি দিতে তারা সম্মত হন। মিরসরাইয়ের অধিবাসী সাইফুল পরিবার পরিজন নিয়ে নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে বসবাস করেন।

অপহরণ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আজ সকালে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাধারাকে জানান, আমি ও আমার পরিবার বর্তমান আতঙ্কে আছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তারা (অপহরণকারীরা) আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েই যাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি আশ্রয় চেয়ে হালিশহর থানায় সাধারণ করবে বলেও জানান।

অন্যদিকে, এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এটি অপহরণের কোন ঘটনা নয়। ব্যবসায়িক একটি বিষয়ে মিটিং হয়েছিল আমাদের মাধ্যে। মিটিং শেষে তিনি চলে গিয়েছেন। এখানে অপহরণে কোন ঘটনা ঘটেনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব ঘটনা সাজানো হয়েছে।

এর আগে এ ঘটনায় হালিশহর থানায় যুবলীগ নেতা নওশাদ ও কয়েকজন সহযোগীকে আসামি করে একটি মামলা (১৯/২০২০) দায়ের করেছিলেন অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী সাইফুলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। এতে নওশাদ মাহমুদ রানা ছাড়াও আরও যাদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন নওশাদের ভাই পাপ্পু, মোহাম্মদ মাসুদ ওরফে পাগল মাসুদ, বউবাজার ঈদগাঁ এলাকার ইকবাল, সাখাওয়াতসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মুহাম্মদ সাইফুল স্ত্রীসহ ছেলেমেয়ে নিয়ে নিজের প্রাইভেট গাড়ীতে করে হালিশহর থানার বউ বাজার এলাকার দুলহান কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের দাওয়াত খেয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ীতে উঠতে গেলে আগে থেকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ব্যবসায়ীক বিরোধ থাকা বউবাজার এলাকার মৃত শামসুল আলমের ছেলে নওশাদ মাহমুদ রানা (৫৩) এবং তার ড্রাইভার মুহাম্মদ ইকবালসহ ১০/১৫ জন মিলে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে মারধর করে একটি সিলভার কালার নোহা করে নিয়ে যায়।

ওই সময় বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা লোকজন বাধা দিলে তাদেরও লাঠি সোঠা ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সাইফুলকে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। রাত ২টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা পরিবারের সদস্যরা তার কোনো হদিস পাননি। পরে বিভিন্ন মহলে প্রশাসনের অব্যাহত চাপ এবং মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের যৌথ সমঝোতা বৈঠকের পর অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দিতে সম্মত হয় এবং শুক্রবার পৌঁনে তিনটার দিকে তাকে চোখ বেধে জিইসি মোড়ে রেখে যায় অপহরনকারীরা।

জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, শুক্রবার বিকেল হালিশহরের বউবাজার এলাকার দুলহান কমিউনিটি সেন্টার থেকে আমার স্বামী সাইফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায় নওশাদ মাহমুদ রানা ও তার ড্রাইভার ইকবাল। এসময় ১০/১৫ জন যুবক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শত শত মানুষের সামনে অস্ত্রের মুখে তারা একটি সিলভার কালার নোহা গাড়িতে করে সাইফুলকে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর আমি হালিশহর থানায় অভিযোগ করি। পুলিশের সহযোগিতার জন্য সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আমরা থানায় বসে ছিলাম। কিন্তু অপহরনকারীরা তাকে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্থান পরিবর্তন করার কারণে পুলিশের উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ হয়।

জানা গেছে, এর আগে ব্যবসায়ী সাইফুল ও যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার মধ্যে কমিশন নিয়ে ঝামেলা তৈরি হলে নগর পুলিশের এক প্রভাবশালী ওসির মধ্যস্থতায় ডকুমেন্ট অনুযায়ী আপস-মীমাংসা হয়েছিল।

অপহৃত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে কমিশন ভোগ করা যুবলীগ নেতা নওশাদ যুবলীগের বিতর্কিত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর কমিটির সদস্য ছিলেন।

বাংলাধারা/এফএস/এএ

আরও পড়ুন