বিশেষ প্রতিবেদক »
‘ওগো, নির্জনে বকুলশাখায় দোলায় কে আজি দুলিছে, দোদুল দুলিছে/ ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল আঁচল আকাশে হতেছে আকুল/ উড়িয়া অলক ঢাকিছে পলক, কবরী খসিয়া খুলিছে’।
বর্ষার প্রকৃতিতে বকুলের স্বরূপ যেন এমনি। প্রকৃতিকে আরো সুন্দর করে তোলে। রাতে প্রস্ফুটিত সুগন্ধি বকুল সারাদিন ঝরতে থাকে। আর মাটিতে তৈরি হয় ফুলের বিছানা। এই যেন কবরী খুলিয়া ঝরে পড়ছে বকুল! অথবা বলা যায় এই পুষ্পবর্ষণ যেন প্রকৃতির কাছে অঞ্জলি! শহরের অলিগলিতে বকুল বিছানো পথে হেঁটে যায় পথিক। বুক ভরে নেয় বকুলের মিষ্টি গন্ধ। একটা সময় ছিল যখন চট্টগ্রাম শহরের যেখানে সেখানে, বাড়ির আঙ্গিনায়, উঠানে দেখা যেত এ ফুলটি। কিন্তু এখন আর আগের মত দেখা যায় না ফুলটি। হঠাৎ চলার পথে যান্ত্রিক এ শহরে এখনো কিছু জায়গায় টিকে আছে এই সুগন্থি বকুল। নগরীর শিল্পকলা একাডেমি, ষোলশহর দু’নম্বর গেট, গণি বেকারি, সিআরবি এলাকায় দেখা মেলে এ বকুল ফুলের।

আমাদের দেশের অতি পরিচিত বকুল শুধু দেখতে সুন্দর আর সুগন্ধি ফুল হিসেবেই পরিচিত নয়, এর রয়েছে অনেক রকম আয়ুর্বেদিক ও ঔষধি গুণ। চিরহরিৎ বৃক্ষ বলা হয় বকুল ফুলের গাছকে। কারণ এই গাছ কখনোই পাতাশূন্য হয় না। এই ফুলটিকে গ্রীষ্মকালীন ফুল বলা হলেও আসলে বকুল ফুল বসন্তের শুরু থেকে ফোটা শুরু করে আর থাকে অনেকদিন পর্যন্ত একেবারে পুরো শীতকাল জুড়ে।
বকুলের আয়ুর্বেদিক ও ঔষধি গুণ অনেক। বকুল ফুলের রস হৃদযন্ত্রের অসুখ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। শুকনো বকুল ফুলের গুড়া নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিলে মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বকুল গাছের ছাল দিয়ে কাটা ছেঁড়ার ক্ষত পরিষ্কার করা যায়। এছাড়াও বকুল গাছের ছাল ও তেঁতুল গাছের ছাল সিদ্ধ করে পাচনের মাধ্যমে তৈরি তরল ঔষধ ত্বকের নানারকম রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয় বকুলের পাতা সাপের কামড়ে খুবই উপকারী। এছাড়াও বকুলের পাতা সিদ্ধ করে মাথায় দিলে মাথা ব্যথা কমে যায়। পাতার রস চোখের জন্যেও উপকারী।
বাংলাধারা/এফএস/এম