বাংলাধারা ডেস্ক »
২০৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সর্বোচ্চ হতে পারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হার। ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের পূর্বাভাস অনুসারে- এসময় অবকাঠামো খাতে ব্যয়, অর্থনীতি বৈচিত্র্যকরণ এবং উচ্চ উৎপাদনশীলতার সুফল পেতে শুরু করবে বাংলাদেশ।
২০৫৩ সালে কেমন চিত্র হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির? ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স সে ভবিষ্যৎ যেভাবে দেখছে তাই এখানে তুলে ধরা হলো–
২০৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সর্বোচ্চ হতে পারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হার। ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের পূর্বাভাস অনুসারে, এসময় অবকাঠামো খাতে ব্যয়, অর্থনীতি বৈচিত্র্যকরণ এবং উচ্চ উৎপাদনশীলতার সুফল পেতে শুরু করবে বাংলাদেশ।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসের আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করছি, বর্তমানের ৬.৩% থেকে– ২০৩০ এর দশকের মাঝামাঝি বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ৬.৫% হবে’।
দক্ষ মানব সম্পদ, গ্রামীণ এলাকায় আরও বিস্তৃত ইন্টারনেট সংযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ, উদীয়মান খাতসমূহ এবং কর্মক্ষেত্রে আরও নারীর যোগদান– বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হবে– এতে বলা হয়েছে।
তবে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক ঘাটতি, অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের সীমাবদ্ধতা থাকা, প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টস শিল্পে অটোমেশনের চ্যালেঞ্জ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়– বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বিকাশের ক্ষেত্রে নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরির ঝুঁকি হিসেবে থাকবে।
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স সতর্ক করে বলেছে, দেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতির মধ্যে পড়ার সংবেদেনশীলতাই ‘সবচেয়ে বড় হুমকি’।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ভিত্তিক গণমাধ্যম ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা শাখাটি মনে করে, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের চলমান একাধিক মেগা-প্রকল্প সম্পন্ন হলে– উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার যেসব চুক্তির আলোচনা চলছে, সেগুলি কার্যকর হলে তা বিনিয়োগ প্রবাহের সহায়ক হবে।
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স আশা করছে– খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হালকা প্রকৌশল এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের মাধ্যমে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য যোগ করার সরকারি চেষ্টা সফল হলে– তা আরও বিনিয়োগ আনবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
‘বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত- তৈরি পোশাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপনের প্রবণতা চলছে, এর ফলে সৃষ্টি হওয়া নেতিবাচক প্রভাব উদীয়মান খাতগুলির বিকাশের সুবাদে অনেকটাই প্রশমিত রাখা যাবে’ – উল্লেখ করে বলেছে, নতুন ধরনের কর্ম প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব, পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো গেলে– তা উদীয়মান খাতে দক্ষতার ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে।
প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মীরা বিদেশে গেলে– সেখান থেকেও তারা আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন। সেই সাথে মানবসম্পদের অন্যান্য অর্জন যুক্ত হয়ে– ২০৫৩ সাল নাগাদ বাংলাদেশের কর্মমুখী জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব প্রশমনের সহায়ক হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার অবকাঠামো খাতের ঘাটতি পূরণে– বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মেগা-প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করছে। এতে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতের সাথে একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতার চুক্তির আলোচনা চলমান থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া জাপান, সিঙ্গাপুর এবং অন্য কয়েকটি দেশের সাথে একই ধরনের আলোচনার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে।
গবেষণাটি বিশ্লেষণকারী ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্সের একজন অর্থনীতিবিদ অঙ্কুর শুকলা বলেন, ‘২০৪০ এর দশক থেকে বার্ষিক বিনিয়োগ আগের দুই দশকের ৮.৩ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ৮.৪ শতাংশ হওয়ার প্রত্যাশা করছি আমরা’।
উৎপাদনশীলতা স্থিতিশীলভাবে বাড়ার প্রক্ষেপণ করে ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেস তাদের পূর্বাভাসে আশা প্রকাশ করেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের পরিকল্পনাধীন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিদেশি ব্যবসাগুলিকে আকৃষ্ট করবে। গ্রামীণ ডিজিটাল সেন্টার এবং ইন্টারনেট সংযোগের আরও সুগভীর বিস্তার– সেবা প্রদানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
এছাড়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি হলে– তা প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসাগুলিকেও আরও সুদক্ষ করে তুলবে বলে মনে করছে ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেস।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিকাশের পথে সবচেয়ে বড় বিপদ বলেছে ব্লুমবার্গের গবেষণা শাখাটি।
জার্মানওয়াচের বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স) প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে সতর্কবাণী দিয়ে বলেছে, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় বাংলাদেশের অবস্থান বিপুল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এতে সাগরে তলিয়ে যাবে অনেক জমি, কমবে কৃষি উৎপাদন আর বাস্তুচ্যুত হবে লাখ লাখ মানুষ।
আউটলুক প্রতিবেদন জানিয়েছে– ‘ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্স প্রক্ষেপণ করছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৪ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে’।
এর বাইরে পোশাক খাতের বাইরে কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারার ব্যর্থতাকে আরেকটি বড় ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করেছে। কারণ অর্থনীতির প্রধানতম এখাতে এখন বৈশ্বিক পর্যায়ে চলছে অটোমেশন– এতে করে এ খাতে ব্যাপক বেকারত্ব দেখা দিতে পারে। সূত্র : টিবিএস