বাংলাধারা প্রতিবেদক »
বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের সংবাদ পাঠক তাসনুবা আনান শিশির। বর্তমানে তিনি দেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল বৈশাখীতে সংবাদ পাঠের কাজ করছেন। কৈশোরে বিদ্বেষ, ঘৃণা, হয়রানির শিকার হয়েছেন, বাধ্য হয়েছেন পরিবার ছেড়ে দূরে থাকতে। কিন্তু শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন, কাজ করেছেন থিয়েটারে। তার এই অর্জন বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির বাস্তবতা পরিবর্তন করবে বলে বিশ্বাস তাসনুভার।
বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তাসনুবা আনান শিশির তার ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনি নিয়ে কথা বলেছেন।
শিশির জানান, ‘আমি যখন একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম তখন আমার পরিবর্তন ছেলেদের মতো হয়নি। আমার ভয়েস, শরীরের বাহ্যিক গঠন পরিবর্তন হয়নি। দেখা যাচ্ছে, আমি পরছি ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, কিন্তু হাঁটছি-কথা বলছি মেয়েদের মতো। একটা সময় আমি আমার নিজের নাম বলতে পারতাম না। মানুষের মুখের ভাষার নির্যাতন, হয়রানিতে এতটা আতঙ্কিত থাকতাম। আমার বিধ্বস্ত একটা ছেলেবেলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেবেলায় আমার কোনো বন্ধু ছিল না, কারও সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না। কারণ, আমি নিজেই কারও সাথে কথা বলতাম না। কথা বলতে গেলেই আমাকে নানা রকম হ্যারেস করতো, অনেক সময় যৌন হয়রানিরও শিকার হয়েছি।
তাসনুবা আনান শিশির মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই ঘর ছাড়তে হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখন দেখতে পাচ্ছিলাম আমার কারণে আমার বাবাও অসম্মানিত হচ্ছেন। আমার কারণে পাশের একজন মানুষ বাবাকে খারাপ কথা বলছে, সেটা আমার ভাল লাগেনি।’
এসএসসি পরীক্ষা পাশ করেই ঘর ছাড়লেও তাসনুবা আনান শিশির কখনও পড়াশোনা ছাড়েনি। পড়াশোনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সব সময় বলতো, পড়াটা চালিয়ে যেতে হবে। তাই আমি কখনও পড়াশোনা ছাড়িনি। অন্তত পড়াটা চালিয়ে যেতে পারলে কোথাও একটা যেতে পারবো। সেজন্য শত অপমান সহ্য করেও আমি পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। তাহলে আমার কথা বলার একটা প্লাটফর্ম তৈরি হবে। আজ আমি সেই প্লাটফর্ম পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘একটা সময় স্রষ্টার প্রতি খুব রাগ হয়েছিল, কেন আমি সাধারণ মেয়ে হলাম না। কিন্তু প্রত্যেকটা সৃষ্টির তো একটা রহস্য ও উদ্দেশ্যে থাকে। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের বিরাট ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির একটা বড় পরির্তন আনতে চান।’
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল ৮ই মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে তাঁকে টিভির পর্দায় দেখতে পারবে দর্শকরা।
তাসনুবা আনান শিশির পড়াশোনার পাশাপাশি থিয়েটারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন নেপথ্য কণ্ঠদাতা হিসেবে।
তাসনুবা আনান শিশির ১৯৯১ সালের ১৬ জুন বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম সামসুল হক, মা জামিরুল বেগম। এসএসসি পরীক্ষার পর তিনি নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে সমাজকর্ম বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। পাশাপাশি ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে পাবলিক হেলথ বিষয়ে আরও একবছরের জন্য মাস্টার্স করছেন।
বাংলাধারা/এফএস/এআই