ksrm-ads

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

বাতাসে দোল খায় শরতের কাশফুল

kashfull

ঋতু অনুসারে ভাদ্র-অশ্বিন মাসজুড়েই শরৎকালের রাজত্ব। প্রকৃতিতে শরৎ আসে নতুন রূপ নিয়ে। যুগ যুগ ধরে দেখা গেছে, শরৎকাল এলেই গ্রাম-বাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট, পাহাড়ের ডালায় ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে দেখা মেলে শরতের রূপের অন্যতম কাশফুলের মন মাতানো ঢেউ। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার চরখিদিরপুর,শাকপুরা ও জৈষ্টপুরা এলাকার কিছু কিছু জায়গায় সরে জমিনে ঘুরে দেখা গেছে বাতাসে ঢেউ তুলছে শরতের কাশফুল।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শরৎকে বলা হয়ে থাকে ‘ঋতুরানি’। নীল আকাশে সাদা তুলার মতো মেঘ, বিস্তীর্ণ ধবল কাশবন আর ভোরে শিশিরভেজা শিউলি ফুলের ঘ্রাণ, এই তিনে মিলে শরৎকাল।

নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুল দেখলেই আমরা সবাই বুঝি এসেছে শরৎ। কারণ কাশফুল শরতের আগমনের প্রতীক। এই ঋতুতে পালকের মতো নরম ও ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল বাতাসে দোলে মোহনীয় ভঙ্গিমায়। মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুল যখন বাতাসের দোলায় দুলতে থাকে তখন মনটাও যেন আন্দোলিত হয়। প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এর আগমনী বার্তা। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যে অজান্তেই মানুষের মনে বয়ে বেড়ায় ভিন্ন রকম এক আনন্দের ঝিলিক। তাই কাশফুলের নৃত্য ছাড়া শরৎ ঠিক জমে ওঠে না। নীলাকাশ এর পটভূমিতে শুভ্র কাশের ঝাড়, আহ কী অপরূপ সৌন্দর্য্য প্রকৃতির! তাইতো প্রেমিক কবি জীবনানন্দ বলেছেন—
‘বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি,
তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।’

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় বোয়ালখালী উপজেলার কর্ণফুলি নদীতীরবর্তী এলাকার পশ্চিম গোমদন্ডী, কধুরখীল, চরণদ্বীপ, শ্রীপুর খরণদ্বীপ ও শাকপুরা এলাকার নদীর তীরে খাল-বিল, ক্ষেতের আইল ও পুকুরপাড়সহ মাঠে-ঘাটে কাশবনে ভরপুর ছিল। কালের বিবর্তনে দিন দিন বোয়ালখালী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। এখন গ্রামগঞ্জে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশবন চোঁখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে।

তারা বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত। নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি ও কল-কারখানা। যার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে শরতের সৌন্দর্য।

এ বিষয়ে বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা সেতু ভূষণ দাশ বলেন, কাশফুল আসলে অন্যান্য গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের মতো ফোটা কোন ফুল নয়, এটি তৃণ জাতীয় উদ্ভিদে ফোটা ফুল, যাকে আগাছাও বলা যায়। নদীর ধারে, পতিত জমিতে ও বিস্তৃত মাঠে যেখানে পলি ও বেলে মাটির মিশ্রণ থাকে সেখানেই জন্মায় ও ফুলবতী হয় এই মনোমুগ্ধকর কাশবন।

বর্তমানকালে পতিত জমির স্বল্পতা, শিল্পায়ন ও নগরায়নের ব্যাপক প্রভাব, কৃষির উপরে জোর দেওয়া এবং নির্বিচারে আগাছানাশক ব্যবহারের কারণে আগের মতো দেখা যায় না ‘শ্বেতবসনা এ নর্তকীর দলকে’। তাই শরতের রূপও কেমন যেন নির্জীব।

তিনি বলেন, কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। আপনা থেকে অথবা বীজ ছিটিয়ে দিলেই কাশবনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। উঠানের পাশেও এই কাশবন চাষ করা যেতে পারে।

এর বহুবিধ ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাশের চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি তৈরি করে থাকে। আর কৃষকরা ব্যবহার করে ঘরের ছাউনি হিসেবে।

প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা কমে যাওয়া এবং উপলদ্বি না থাকায় কাশবন ও কাশফুল হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এর সৌন্দর্য যেন বিলুপ্তি না হয়ে যায়, এই জন্য কৃষিবিদ ও চাষিরা কাশফুলের চাষ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন