বান্দরবান প্রতিনিধি »
বৈশাখ মাসেও পাহাড়ে কলার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখা গেছে।
পাহাড়ে উৎপাদিত ফলের মধ্যে কলা অন্যতম। পাহাড়ি অঞ্চলে বাংলা, চাঁপা ও দেশীয় সাগরসহ বিভিন্ন জাতের কলার চাষ হচ্ছে বহু বছর ধরে। তবে চাহিদা ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় লাভজনক দেশীয় বাংলা কলা চাষের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। গত বছর বান্দরবানের প্রায় আট হাজার ১২৫৬ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। কলা উৎপাদিত হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ । এ বছর কলাচাষের পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে, গতবারের মতো এ বছরও বান্দরবানে কলা চাষের দিকে ঝুঁকছে চাষিরা।
পাহাড়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা সদর সহ রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এবছর ব্যাপকহারে কলা চাষ করা হবে। লাভজনক হওয়ায় কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন স্থানীয় চাষিরা। ইতোমধ্যে বান্দরবানের উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের কলা স্থানীয় হাটবাজার সহ দেশে বড় বড় শহরে চাহিদা ও জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে গেছে।
পাহাড়িরা বান্দরবান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদনসংলগ্ন বাজারে সারিবদ্ধভাবে কলা বিক্রি করেন। সপ্তাহের রোববার ও বুধবার এখানে বসে জমজমাট কলার হাটবাজার। হাটবারে বান্দরবান কেন্দ্রীয় মসজিদের সংলগ্ন শহরটি পরিণত হয় কলার শহরে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কলা আসতে থাকে হাটে।
আজ বুধবার (১ মে) বান্দরবান হাটবাজারে চাষীরা জানান, জেলার পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া, দোহাজারি, আমিরাবাদ, পটিয়া, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা পাহাড়িদের কাছ থেকে পাইকারি দামে কলা কেনে অনেক সময় বিক্রি হয় ছড়াপ্রতি আকাড় ধরণ দেখে এরপর বিকেলে ট্রাক ও পিকআপ,টিএস গাড়ি করে কলা নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আৎড়ত অঞ্চলে। হাটবাজারের দিন ১ থেকে ১৫ ট্রাক ও পিকআপ, টিএসের করে কলা কিনে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা দেশে বিভিন্ন প্রান্তরে। বাজারে কলা নিয়ে বসার জন্য পাহাড়িদের ছড়াপ্রতি ট্যাক্স দিতে হয় দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন টাকা। এছাড়া কলা নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যবসায়ীদেরও আরেক দফা টোল দিতে হয়।
রুমার কলাচাষী মিঃ মংমেচিং মারমা জানান, পরিশ্রম ও সময় বিবেচনা করলে পাহাড়ে জন্যে কলা চাষ খুবই লাভ জনক। পাহাড়ে মাটিতে বাংলা কলা, চাঁম্পা কলা সহ সাগড় কলা বেশি চাষ হয়। তিনি আরো জানান, আমার গ্রামের ৫০এরও বেশি রয়েছে একেক পরিবারে ১ থেকে ৩ একর জমিতে কলা চাষ রয়েছে। তবে বান্দরবানে বিভিন্ন উপজেলায় কলাসহ উৎপাদিত ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের হিমাগারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে তুলনামূলক কম দামে কলা বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
রুমা সদর এলাকা থেকে আসা অংবাচিং মারমা বলেন, কলা চাষ করে আমার ভাগ্য বদলেছে। বর্তমানে ৯ একর পাহাড়ি জমিতে কলা ছাড়াও মিশ্র ফলের গাছ রয়েছে। ফল বাগানের আয় দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। দুটি ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়ালেখা করাচ্ছি। বছরে ফল বিক্রি করে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় হয়।
কলা ব্যবসায়ী মিন্টু মিয়া ও সবুজ বলেন, পাহাড়ে কলা রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন হাটে এর জনপ্রিয়তা ও চাহিদে বাড়ছে। এখান থেকে কলা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। ছড়াপ্রতি ১ থেকে ৩৫ টাকা লাভ হয়। তবে গাড়িতে করে কলা নেওয়ার পথে অনেক কলার ছড়া নষ্ট হয়ে যায় এজন্যে অনেক সময় বড় অঙ্কের ক্ষতিও গুনতে হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবাহাওয়া কলা চাষের উপযোগী। অনেক জাতের হলেও বান্দরবানে মূলত বাংলা ও চাঁপা কলার উৎপাদন বেশি। দুটি জাতের মধ্যে বাংলা কলার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এছাড়া এ জাতের কলাটি বেশি দিন টেকসই থাকে। দ্রুত নষ্ট হয় না।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর