আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »
পাহাড়ের অন্যতম উৎসবের নাম রাজপূণ্যাহ মেলা। এই মেলায় জড়ো হয় পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর। এসময় শুরু হয় খাজনা আদায়। যা বছরজুড়ে জুমে কিংবা সমতলের যেসব ফসল-ফলাদি উৎপাদন করেন সেটি খাজনা হিসেবে দিতে হয় পাহাড়ের রাজার নিকট। কিন্তু টানা তিনবছর রাজ পূণ্যা মেলা না হওয়াতেই পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে হারাতে বসেছে এমন একটি ঐতিহ্য মেলা। তবে মেলাটি না হলেও বান্দরবানে বিভিন্ন মৌজায় চলছে জুম খাজনা আদায়ের অনুষ্ঠান ‘অলুংজাঃ পোয়ে’।
বৃহস্পতিবার রোয়াংছড়ি উপজেলা ৩৪০নং তারাছা মৌজায় এমন একটি খাজনা আদায়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তারাছা মৌজার হেডম্যান উনিংহ্লা মারমা।
অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধরে রাখতে নিজ এলাকার জুমিয়াদের কাছ থেকে খাজনা বাবদ একর প্রতি ৬টাকা ৫০ পয়সা, উপঢৌকন হিসেবে দেশি মুরগি ও পাহাড়িদের তৈরি এক বোতল মদ এবং নজরানা ৫০০ টাকা আদায় করা হয়।
জানা গেছে, জুম খাজনা আদায়ের জন্য বোমাং রাজারা ১৮৭৫ সাল থেকে বোমাং সার্কেলে এই অনুষ্ঠানের প্রচলন শুরু হয়। তবে কালের বিবর্তনে এটি এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। কেউ অনানুষ্ঠানিকভাবে আদায় করছে জুম খাজনা। তবে অর্থনৈতিক সংকট ও করোনা পরিস্থিতির কারণে বান্দরবানে দীর্ঘ তিন বছর ধরে বোমাং সার্কেলের শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান রাজপূণ্যাহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে তারাছা মৌজার হেডম্যান উনিংহ্লা মারমা জানান, খাজনা আদায়কে ঘিরে তিনি টানা কয়েক বছর ধরে আনুষ্ঠানিকতা পালন করে আসছেন। যার ফলে তার এলাকা সব পাড়াপ্রধান কারবারীদের সাথে সরাসরি মিলিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘কারবারীদের সাথে পাড়ার সামাজিক শৃঙ্খলা, রীতিনীতি ও পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। যার যার পাড়ায় ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘নজরানা হিসেবে টাকার পরিমাণ মৌজার এলাকাভেদে যে যার মত আদায় করা হয়। আদায়কৃত খাজনার একটা অংশ সার্কেল চীফ বা রাজার কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
এসময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ৩৪০ নং তারাছা মৌজার প্রবীণ ব্যক্তি মোহাম্মদ আব্দুল গফুর, বান্দরবান প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ।