মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»
বঙ্গবন্ধু টানেল বাস্তবায়নের শেষ প্রান্তে। আনোয়ারায় এপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। টানেলের ভেতরের ভেতরের সড়কের কাজেও অগ্রগতি যেন অর্শ্বের গতিতে চলছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা আনায়ারাবাসি সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করবে। বিশেষ করে ব্যবসায় মেতে ওঠার পরিকল্পনা চলছে আনোয়ারার মানুষের মাঝে। তবে আনোয়ারার উন্নয়ন এখন স্বপ্ন বাস্তবায়নের মতোই এগিয়ে চলছে। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর ওপারের উন্নয়নের ধারা লাগাম টেনে ধরার মতো নেই। যেন অর্শ্বের গতিতে ছুটে চলছে উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চট্টগ্রামের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেন ওয়ে ও কক্সবাজার রেল লাাইন প্রকল্পসহ মোট তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন, ২০২২ সালের শেষে বঙ্গবন্ধু টানেল ও ২০২৩ সালের শেষে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের কাজ শেষ হবে। তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের(চউক) এ প্রকল্পটির শেষের নির্দিষ্ট সময় বলতে পারছে না প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্রিজ অথোরেটি(বিবিএ)’র একটি প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ দেশের বাহিরে থাকার কারনে অগ্রগতির তথ্য সংশ্লিষ্টরা প্রদান করতে অপারগ। তবে সম্পূর্ণরুপে টানেল বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের বিশেষ করে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা পর্যটন এলাকার পরিপূর্ণতা পাবে।
প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী প্রাপ্ত তথ্য মতে, টানেলের ৪ লেন বিশিষ্ট এপ্রোচ সড়কের মধ্যে রয়েছে পতেঙ্গা অংশে ৫৫০ মিটার আর আনোয়ারা অংশে ৪ হাজার ৯৫২ মিটার। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭ মিটার। টানেলের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের বাহিরে পতেঙ্গা এলাকায় কাটা হবে ২০০ মিটার আর আনোয়ারায় কাটা হবে ১৯০ মিটার। কার্যপরিধি ২৫ মিটার। আনোয়ারা অংশে ফ্লাই-ওভারের দৈর্ঘ্য ৬৩৭ মিটার। মোট ৫ বছর সময়ের মধ্যে প্রায় ৪ বছর অতিক্রান্ত হল। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই টানেলের কাজ শেষ হবে বলে সেতু বিভাগের কয়েক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ১২ মিটার বৃত্তাকার এই টানেল আচ্ছাদিত অংশ পতেঙ্গা অংশে ১৯৫ মিটার আর আনোয়ারা অংশে ২৩০ মিটার।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগের (বিবিএ)সূত্রে জানা গেছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ দেশের প্রথম ও একামাত্র টানেল। এখন এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে এটি একটি মাইলফলক চিহ্নিত হচ্ছে। চায়না কমিউনিক্যাশন কন্সট্রাকশন কোম্পানী(সিসিসিসি) নামের একটি ঠিকাদারপ্রতিষ্ঠান এই টানেলের কাজ করছে। চীনা ও বালাদেশী মিলে প্রায় সাড়ে বারশো জন শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। আবার সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে কনসালটেন্ট অফিস কক্ষে কাজ করছেন অর্ধশত কর্মকর্তা -কর্মচারী। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করছে টানেল নির্মানের কাজ। কনস্যালটেন্ট হিসেবে কাজ করছে এসএমইসি- সিওডব্লিওআই।
বিবিএ’র ইস্টিমিটেড কস্ট এনালাইসিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই টানেলের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার বা ১০৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন। এরমধ্যে সরকারী অর্থায়ন থেকে আসছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার বা ৩৫০ দশমিক শূণ্য তিন মিলিয়ন। প্রজেক্ট এসিসট্যান্স থেকে বিনিয়োগ করা হচ্ছে ৫ হাজার ৬৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৭৫০ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ মানেই ‘মাল্টি-ল্যান্ড রোড টানেল আন্ডার দ্যা রিভার কর্ণফুলী’। এই টানেলে থাকছে দুটি টিউবের ন্যায় চারলেনের সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনা। উভয়দিকে টানেলের মুখ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ হবে। সেতু বিভাগের হিসেব অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুলেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে খুব শীঘ্রই।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু টানেলের এ পর্যন্ত ৮২ ভাগ কাজ শেষ হওয়ায় এই বছরের শেষের দিকে চালু হয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু টানেল ও এপ্রোচ সড়ক এমন ধারনা প্রকৌশলীদের। এ উন্নয়ন হলো কর্ণফুলী নদীর দক্ষিন পাড়ের এপ্রোচ সড়কের উন্নয়ন চলছে দ্রুত গতিতে। দক্ষিন পাড়ের ৪ হাজার ৯৫২ মিটার এপ্রোচ সড়কের উন্নয়ন এখন আশা জাগানো স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে। উন্নয়নের এই গতিধারায় এলাকাবাসির চোখে মুখে স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিক্ষা। তাই মহা খুশি এলাকাবাসি।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ এর অ্যালাইনমেন্ট হলো চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে। বঙ্গবন্ধু টানেলের দুটি টিউব চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করছে। টানেলের প্রবেশপথ নেভি কলেজের কাছেই আর বহির্গমন পথ হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানা সংলগ্ন ঘাট দিয়ে। প্রকল্প সাইটের উভয়দিকে বগুড়ার আরডিএ কর্তক চারটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে প্রকল্বের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য। এছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উভয়দিকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার পতেঙ্গা প্রান্তে ১৫ মেগাওয়াট স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আনোয়ারা প্রান্তে বিদ্যুত সাবস্টেশন নির্মাণ করছে।