কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারি সড়কের হিমছড়ি ঢালায় সশস্ত্র ডাকাতের গুলিতে বাবার সামনেই এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সামাজিক প্রোগ্রামে গান পরিবেশন শেষে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালের দিকে সিএনজি অটোরিকশায় বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জনি দে রাজ (২০) রামু উপজেলার পাহাড়ি জনপদ ঈদগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চরপাড়ার (শিয়াপাড়া) এলাকার তপন দে’র ছেলে। জনি ঈদগাঁও কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক প্রোগ্রামে গান পরিবেশন করতেন জনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঈদগড় ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন জানান, ঈদগাঁও থেকে ঈদগড় আসার পথে হিমছড়ি ঢালায় সিএনজিবাহী যাত্রীরা ডাকাতদ্বারা আক্রান্ত হন। এসময় ডাকাতের গুলিতে কণ্ঠশিল্পী জনি নিহত হয়েছে। অন্য যাত্রীদেরও আঘাত করেছে ডাকাতদল। সড়কটি দিয়ে পার্বত্য নাইক্ষংছড়ি, রামু ও কক্সবাজার সদর এ তিন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজনকে চলাচল করতে হয়।
নিহতের বাবা তপন দে’র বরাত দিয়ে ঈদগড়ের সমাজকর্মী নুরুল আবছার জানান, বুধবার রাতে একটি সামিজক আয়োজনে গান পরিবেশন করতে গিয়েছিলেন জনি রাজ। সাথে তার বাবা এবং এলাকার আরো একজন ছিলেন। প্রোগ্রাম শেষে বৃহস্পতিবার সকালে সিএনজি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পিতা-পুত্রসহ অন্যরা। ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালায় পৌছামাত্র ১০-১৫ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল তাদের গতি রোধ করে। তারা জনি রাজকে অপহরণ করার চেষ্টা চালায়।
‘এসময় তাদের সাথে ধস্তাধস্তি করে জনি। তখন তাকে এবং অন্যদেরও প্রহার করে ডাকাতদল। ধস্তাধস্তি হাতাহাতিতে রূপ নিলে এক পর্যায়ে জনির মাথার ডানপাশে লাগিয়ে গুলি করে পাহাড়ের ভেতর ঢুকে যায় ডাকাতদল। গুলি খেয়ে রাস্তার উপর ঢলে পড়ে গেলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাকে উদ্ধার করে ঈদগাঁও মেডিকেল নামে ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’- জানান সমাজকর্মী নুরুল আবছার।
ঘটনাস্থলের অদূরে পশ্চিম ভোমরিয়া ঘোনা এলাকার পল্লী চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, গুলিবিদ্ধ জনি রাজকে হাসপাতালে আনার সময় পুরো পথেই রক্তের পোয়ারা পড়েছে। এসময় সাথে থাকা তার বাবা গাড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ছেলের মৃত্যু হয়েছে জেনে হাসপাতাল এলাকায় বার বার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি।
ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক আবদুল হালিম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কক্সবাজার জেলার পুরো পুলিশ টিমই নতুন। ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রে আসা সকল পুলিশ সদস্য এখানকার জন্য নতুন। সবখানে চিনে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে। নতুন জায়গায় এসে আমি নিজেসহ অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
তিনি বলেন, ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি এলাকাটিতে সকাল ৮টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ পাহারা থাকতো জানতে পেরে সেভাবেই পুলিশ টহল চালু রয়েছে। তবে, সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ টহল শুরুর আগে সিএনজি পেয়ে দুর্বৃত্তরা এ্যাটাক করেছে। সিএনজি মালিক সমিতি জানিয়েছে জনি রাজদের আগে আরো ভোরে একাধিক সিএনজি যাত্রী নিয়ে ঈদগড়-বাইশারি গেছে।
ওসি হালিম আরো বলেন, খবর নিয়ে জেনেছি এর আগেও নিহত জনি রাজকে দুর্বৃত্তরা এ্যাটাক করেছিল। আজও (বৃহস্পতিবার) তাকে এরা অপহরণ করতে চেয়েছিল বলে প্রকাশ পেয়েছে। পূর্ব কোন ঘটনার জেরে এটা হলো কিনা তাও খতিয়ে দেখছি আমরা। তার মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও সড়কটির হিমছড়ি ঢালায় ডাকাতের গুলিতে একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটে। এর একটু পূর্বে পানেরছারা ঢালায় ডাকাতের গুলিতে পুলিশের এক নায়েক খুন হবার ঘটনাও আছে। বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি থেকে অপহরণ হন প্রবাসী, শিক্ষার্থী, ডাক্তার, চাকুরিজীবী, কৃষকসহ নানা পেশার মানুষ।বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে এসআই আবু মুছা ও এসআই আনিস দায়িত্বপালন কালে ঝুঁকি নিয়ে এসব ডাকাতদের গুলি করতে করতে পাহাড়ের ধাওয়া দেয়ার পর কয়েক বছর ডাকাতি ও অপহরণ বন্ধ হয়। তারা বদলি হয়ে বছর দুয়েক আগে চলে যাবার পর সেভাবে প্রতিরোধ গড়ে না উঠায় ডাকাতদল আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বাইশারির স্থানীয় মুফিজুর রহমানসহ অন্যরা।
বাংলাধারা/এফএস/এএ