ksrm-ads

১৭ মে ২০২৫

ksrm-ads

বিএনপির বর্ষবরণ কর্মসূচিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

মোটরসাইকেলে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ অবরুদ্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আনন্দ শোভাযাত্রা রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। মিরসরাইয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর দুটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এসময় মহাসড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার ফলে পুরো উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, স্থবির হয়ে পড়ে যানচলাচল।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে মিরসরাই পৌর সদরে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সমর্থিত নেতারা। মিছিলের নেতৃত্ব দেন সাবেক উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর। শোভাযাত্রা শেষে দলীয় গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় যুবদল কর্মী রিয়াদ ও বিএনপি নেতা বাদশাহর মধ্যে তর্কাতর্কি থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

বিকেলের দ্বিতীয় ধাক্কা: মিছিল থেকে হামলা, আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ

দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে আরও একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে অংশ নেওয়া কিছু নেতাকর্মীর হাতে গাছের লাঠি দেখা যায়। মিছিল শেষে তারা চলে গেলেও কিছু কর্মী কোর্ট রোডে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়।

পরবর্তীতে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারী উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আরও একটি মিছিল বের হয়। এসময় মহাসড়কে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কামাল উদ্দিন গ্রুপ চট্টগ্রামমুখী মহাসড়কে একটি মোটরসাইকেল ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

করেরহাটেও সংঘর্ষ, আহত দুই

একইদিন সকালে করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর গ্রামেও বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আহত হন শহিদুল ইসলাম (৫২) ও আলাউদ্দিন (৩৮)। আহত আলাউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফাহিম জালাল জানিয়েছেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১৫-২০ জন আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫-৬ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তবে এখনো পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমিটি গঠন থেকেই উত্তেজনার সূচনা

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার মিরসরাই উপজেলা, পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেন। এসব কমিটিতে অধিকাংশ পদে নুরুল আমিনের অনুসারীরা স্থান পায়, আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা জায়গা পাননি বললেই চলে। এর পর থেকেই শুরু হয় দলীয় কোন্দল। ২৫ মার্চ মহাসড়ক অবরোধ ও ঝাড়ু মিছিল, ২৬ মার্চ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণকে ঘিরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গসহ সংঘর্ষে যুবদল কর্মী জাবেদ নিহত হন। এরপর ৩০ মার্চ জেলা কমিটি তিনটি কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করে।

পুনরাবৃত্তি হচ্ছে সহিংসতার, থামছে না কোন্দল

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিকে ঘিরে আবারও দেখা দিল সহিংসতার পুনরাবৃত্তি। স্থানীয় নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিলেও বাস্তবতা বলছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশই রূপ নিচ্ছে ভয়াবহ সহিংসতায়, যা দলের ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

আরও পড়ুন