চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে বিজয় মেলা তিল ঠাঁয় নেই মেলার ভেতরে, বাইরে। মূল ফটকে জনস্রোতের ধাক্কা। নারী, শিশু ছাড়াও তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি বেশি। স্টলগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। তবে বেচা কেনা কম। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সার্কিট হাউস সংলগ্ন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের খালি মাঠে চলছে ছয় দিনব্যাপী মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা। কিন্তু উন্মুক্ত মেলাটির প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ এক হওয়ায় গেটেই দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড ভীড়, সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। পাশাপাশি এই যানজট গড়িয়েছে আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও।
বের হতে গিয়েও নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় তারাও পড়েছেন দুর্ভোগে। তবে অনেককে আবার এই ভীড়ের মধ্যেও শিশুদের ঘাড়ে/কাঁধে নিয়ে বের ও প্রবেশ করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন উন্মুক্ত এই স্থান মেলার জন্য নিরাপদ নই। পাশেই রয়েছে গুরুত্বপুর্ণ সার্কিট হাউজ। আয়োজকদের এমন স্থান নির্বাচন অভাবনীয়।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে কাজীর দেউড়ির বিজয় মেলায় ছিল এমন চিত্র।
এদিকে মেলার গেটের বাইরে সড়কে দর্শনার্থীদের ভীড়ে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। মেলার গেটের যানজট ছাড়িয়েছে লালখান বাজার পর্যন্ত। এমন তীব্র যানজট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশও। চেহারা দেখে মনে হয়েছে তারাও অনেকটা নিরুপায়।
আসকার দীঘির বাসিন্দা সুজন বলেন অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছি। গনপরিবহনে এসেছিলাম জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকায় হেঁটে বাসায় যাচ্ছি।
সপরিবারে মেলায় এসেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল খালেক। তিনি প্রধান ফটকে ভিড় দেখে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক্ষন।তিনি বলেন, বিজয় মেলা চট্টগ্রামের একটি বড় মেলা। ছোট্ট পরিসরে এত বড় মেলা আয়োজন সম্ভব না। আয়োজকদের উচিত মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়া ও সড়কের যানচলাচলে বিষয় মাথায় রেখে স্থান ঠিক করা।
বন্ধুদের সঙ্গে মেলা দেখতে এসেছিলেন কলেজছাত্রী তাসলিমা নাসরিন। তিনি বলেন, মেলার ভেতরে ঢোকা তো দুঃস্বপ্ন। মেলার দক্ষিণ পাশের সড়কের যে ফুটপাত তা-ও ভাড়া দেওয়া হয়েছে দোকানিদের কাছে। হেঁটে যে প্রবেশপথে যাবো তার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছি।
সবাই যে ফিরে যাচ্ছেন তা কিন্তু নয়। অনেকে সাহস করে ভিড় ঠেলে ঢুকছেন মেলায়। কেউ কেউ শিশুসন্তানকে কাঁধে নিয়ে ভিড়ের ঝাপটা এড়িয়ে মেলায় ঢুকতে দেখা গেছে।
একজন দোকানি জানান, ছুটির দিনে দর্শক সমাগম হয়েছে বেশি। কিন্তু ক্রেতা নেই। যারা এসেছেন তারা মেলায় ঘুরে ফুচকা, চটপটি খেয়ে বাসায় ফিরছেন।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া ছয় দিনের বিজয় মেলা বিগত বছরগুলোতে আয়োজন করা হয়েছিল নগরের আউটার স্টেডিয়াম মাঠে। জেলা প্রশাসনের খেলার মাঠের মেলা না করার সিদ্ধান্তের পর সেই মাঠে আর মেলা হয়নি। তবে এ বছর বিজয় মেলার জন্য আবারও আউটার স্টেডিয়ামকে বেছে নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু পরে সেখানে না করে রেলওয়ের মালিকানাধীন সিআরবির মাঠে মেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৫ ডিসেম্বর মেলার স্থান আবারও পরিবর্তন করে ভেঙে ফেলা চট্টগ্রাম শিশুপার্কের মাঠে নিয়ে আসা হয় মাটির জিনিস, কুটির শিল্প, হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, ওড়না, ত্রিপিস, চুড়ি, ইমিটেশনের গহনা, ব্লেজার, শীতের পোশাক, মুড়ি মুড়কি, চটপটি, ফুচকা, বগুড়ার দই, ব্যাগ, পাপোসসহ বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি সামগ্রীর শতাধিক স্টল রয়েছে। বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বই, চব্বিশে কী হয়েছিল সেই বিষয়গুলো প্রজন্মকে জানানোর জন্য এ মেলার আয়োজন।