ksrm-ads

১৯ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

বিনা দোষে ফেঁসেছেন এএসআই কামরুল, বেরিয়ে এলো আসল রহস্য!

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

কোতোয়ালী থানাধীন বক্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই কামরুল হাসান কর্তৃক ‘গিরিধারী চৌধুরীকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা’র আনিত অভিযোগ অস্বীকার এবং এই মৃত্যুতে কারো হাত নেই বলে দাবি করেছে নিহত গিরিধারী চৌধুরীর পরিবার। এ বিষয়ে নিহতের পরিবাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এটি একটি দুর্ঘটনা এবং তার মৃত্যুতে কারো হাত নেই বিধায় তারা কারো প্রতি কোন মামলা/অভিযোগ করেননি।

গিরিধারী চৌধুরীকে ‘পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা’র অভিযোগের নেপথ্যের ঘটনা অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ মারামারির একটি ভিডিওকে গত ২৯ এপ্রিল টেরীবাজারে নিহত কাপড়ের দোকান কর্মচারি গিরিধারী চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনার ভিডিও বলে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া তথা ফেইসবুকে ভাইরাল করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে ভাইরাল হওয়া মারামারির ভিডিও-এর ভিকটিম মুড়ির দোকানের কর্মচারি অপু পাল (৩০) এবং নিহত গিরিধারী চৌধুরী (৬২) দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি ও ঘটনাও ভিন্ন।

চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজারের সিকিউরিটি গার্ড, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল বিকাল ১৭.৪৫ টায় সরকার ঘোষিত লকডাউন চলাকালীন টেরীবাজারের সিকিউরিটি মো. মাসুদ আলম (৩২) ডিউটিরত এএসআই কামরুল হাসানকে জানায়- মার্কেট বন্ধ অবস্থায় কাপড় চুরির চেষ্টাকালে তিনি চোরাই মালসহ ২ জন লোক আটক করেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা (গিরিধারী এবং নিখিল দে) মালামালগুলো ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

এভাবে ১৮ মার্চের ঘটনাকে ২৯ এপ্রিলের ঘটনা বলে ফেইসবুকে অপপ্রচার চালিয়েছে কুচক্রীমহল।

পরে পুলিশ মালগুলো পুরাতন বিটের খালী জায়গায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন সিকিউরিটি এবং গিরিধারী চৌধুরী সেখানে উপস্থিত হয়। পুলিশ গিরিধারী চৌধুরীর মালিককে ফোন করতে বললে- সে কাঁপতে থাকে এবং বুকে ব্যাথা করছে বলে অসুস্থবোধ করায় পুলিশ উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কিন্তু চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দোকান কর্মচারি গিরিধারী চৌধুরী মারা যান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিকিউরিটি, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এবং টেরীবাজারের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ যাচাই করে গিরিধারী চৌধুরীকে মারধর, আঘাত কিংবা গ্রেফতারের বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। গিরিধারী চৌধুরীর ময়না তদন্ত রিপোর্টেও গিরিধারী চৌধুরীকে আঘাতের বিষয়ে উল্লেখ নেই।

এ বিষয়ে নিহত গিরিধারী চৌধুরীর পরিবাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এটি একটি দুর্ঘটনা এবং তার মৃত্যুতে কারো হাত নেই বিধায় তারা কারো প্রতি কোন মামলা/অভিযোগ করেননি।

স্থানীয়রা জানান, গিরিধারী চৌধুরী পূর্ব হতে হার্টের রোগী ছিল এবং পূর্বে আরো ২ বার স্ট্রোক করেছেন। সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মেহেদী হাসান কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিও পুলিশ কর্তৃক গিরিধারী চৌধুরীকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের সত্যতা পাননি। তবে গিরিধারী চৌধুরীর সঙ্গীয় নিখিলদে এবং রিক্সা চালককে চড়-থাপ্পরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।

তবে নিখিল দে এবং রিক্সাচালক মো. জামাল উদ্দিনের সাথে মুফোফোনে যোগাযো করা হলে তারা প্রতিবেদককে জানান, পুলিশ কর্তৃক তাদের কোন আঘাত করা হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ দিবাগত রাত অনুমান ১২.৩০ টায় একটি কাভার্ডভ্যান রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে রাস্তা জ্যাম করে মুড়ির বস্তা আনলোডকালে দায়িত্বরত কনস্টেবলদের সাথে অপু পালের (৩০) কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অপু পাল টহল পুলিশকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে এসআই বাবলু কুমার পাল এবং এএসআই কামরুল হাসান অপু পালকে গ্রেফতারের সময় অপু পাল আঘাতের চেষ্টা করলে এএসআই কামরুল হাসান কয়েকটা চড়-থাপ্পড় মেরে অপু পালকে থানায় নিয়ে যায় এবং পরের দিন কোর্টে চালান করে দেয়া হয়।

অপু পালের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অপু পাল জানান, ভুল বুঝাবুঝির কারণে উক্ত অনাকাঙ্খিত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে বিধায় তিনি কারো বিরুদ্ধে কোন মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ করেননি এবং এ বিষয়ে আইনগত প্রতিকার চাননা বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, পরিচ্ছন্ন ও জনবান্ধব এএসআই কামরুল হাসান বক্সিরহাট ফাঁড়িতে কর্মরত থাকা অবস্থায় জামায়েত শিবির, বিএনপি অধ্যুষিত টেরীবাজার এলাকার প্রচুর শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেন। তার কারণে টেরীবাজার এলাকায় চুর, ডাকাত হতে শুরু করে জামায়েত-শিবির কিংবা বিএনপি কোন লোকজন নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। এলাকায় বখাটে ছেলেদের আড্ডা এবং কিশোর গ্যাং এর তৎপরতা এখন নেই বললেই চলে- এলাকাবাসী এমনটাই দাবি করেন।

এছাড়াও তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী এবং ইভটিজিংকারীকে গ্রেফতার করায় সিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবর রহমানের নিকট হতে পুরস্কৃতও হন। ফলে ওই এলাকার কিছু কুচক্রি মহল এবং মাদক ব্যবসায়ী অবৈধ সুবিধা লাভের জন্য ফেইসবুকে মিথ্যা অপপ্রচার করে তাকে অন্যত্র বদলি করেন বলেও অনেকের অভিযোগ।

এ বিষয়ে এএসআই কামরুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে কর্মরত আছেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার এবং তার বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দাবি করেন।

ঘঠনার বিভিন্ন তদন্ত ও স্থানীয় জনমতে জানা যায়, এএসআই কামরুল হাসান সম্পূর্ণ নির্দোষ। পরিশেষে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হলে জনমনে ও নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে- নির্দোষ জনবান্ধব পরিশ্রমী ও পরিচ্ছন্ন এএসআই কামরুল হাসান তার হারানো সামাজিক মান মর্যাদা ফিরে পাবে কি?

মো. সাইফুল সুজন নামে একজন ফেসবুক স্ট্যাটাসে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘দেশ প্রেমই কি তাহলে অপরাধ? একজন চৌকস, জনবান্ধন অফিসারের এমন সম্মানহানির দায় কে নিবে?’

আবছরা হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘অনেক জল্পনা কল্পনা শেষে মিথ্যা অপবাদ আজ সত্যি প্রমাণিত হলো। নির্দোষ মানুষ কখনো দোষী সাব্যস্ত হতে পারে না। যার প্রমাণ এএসআই কামরুল। অনেকে অনেক কিছু বলেছে কিন্তু সত্য কখনো মিথ্যা হতে পারেনা।বাংলাদেশের সব পুলিশকে খারাপ বলা যাবে না, কিছু কিছু পুলিশ আছে আদর্শবান এবং সত্যের প্রহরী। যাক ভাই আল্লাহ সব সময় ভাল রাখুক এবং সব সময় দোয়া করি, শুভকামনা তোমার জন্য।

শাওন নামে একজন স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকে যেইসব ভালো পুলিশদের চিনি তাদের মধ্য কামরুল হাসান আংকেল অন্যতম। একজন সৎ পুলিশ অফিসারের সম্মান যদি কেউ মিথ্যা অপবাদে নষ্ট করতে চাই তাহলে আমি মানহানির মামলা করবো। কারণ আমি জানি একজন পুলিশ অফিসারের সম্মান হলো তার জীবন।’

শাকিল নামে একজন এলাকাবাসী লিখেন, ‘অত্র এলাকার ইয়াবা, গাঁজা, জুয়া, নেশা ব্যবসায়ী, চোর, ডাকাতরাই স্ট্যাটাস দিসে এবং কমেন্ট করেছে। ভালো কোন ছেলে এবং কে কী কমেন্ট এবং পোস্ট করছে এতে বুজা গেছিলো আপনার পিছনে শত্রুর অভাব নাই।এগিয়ে যাবেন দূর্বার গতিতে কামরুল হাসান ভাই। পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো সবসময় ইনশাআল্লাহ।’

অনেকে বলছেন, ‘বিনাদোষে ফেঁসেছেন এএসআই কামরুল’। কেউ কেউ বলে বলছেন, ‘সত্য কখনো চাপা থাকে না, তাই এএসআই কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও মিথ্য প্রমাণিত হয়েছে’। আর কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে- নির্দোষ একজন পরিচ্ছন্ন এএসআই কি সামাজিক মান-মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হবেন? কিংবা কেন বঞ্চিত হবে?

বাংলাধারা/এফএস/এএ

আরও পড়ুন