বাংলাধারা প্রতিবেদন »
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ মার্চ তারিখটিকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা, প্রকাশনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। ইউনেস্কোর অধিবেশনে এই দিবস ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিল, “এই দিবস বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কবিতা আন্দোলনগুলিকে নতুন করে স্বীকৃতি ও গতি দান করবে।”
পূর্বে অক্টোবর মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হত। প্রথম দিকে কখনও কখনও ৫ অক্টোবর এই উৎসব পালিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রোমান মহাকাব্য রচয়িতা ও সম্রাট অগস্টাসের রাজকবি ভার্জিলের জন্মদিন স্মরণে ১৫ অক্টোবর এই দিবস পালনের প্রথা শুরু হয়। অনেক দেশে আজও অক্টোবর মাসের কোনো দিন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের বিকল্প হিসেবে অক্টোবর অথবা নভেম্বর মাসের কোনো দিন কবিতা দিবস পালনেরও প্রথা বিদ্যমান।
কবিতা যে শুধু শুধুমাত্র কাব্য তা নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে তা প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা আন্দোলনে শহীদ ভাষা সৈনিকদের জন্য কবি মাহাবুব উল আলম চৌধুরী লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত কবিতা “কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি”।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিখ্যাত হাংরি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল কয়েকজন কবির মাধ্যমে যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কবি মলয় রায় চৌধুরী। হাংরি আন্দোলনের ঢেউ আঁচড়ে পরেছিল নেপালেও। কবিতার মাধ্যমে তারা সমাজের নানা অনিয়ম তুলে ধরে তৎকালীন শাসকদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রতিবাদের ভাষা কর্কশ আবার কারো কাছে দৃষ্টিকটু লাগলেও সেসময় তাদের কবিতার প্রভাব ছিল বেশ।
কবি শামসুর রাহমান এর কালজয়ী কবিতা ‘আসাদের শার্ট’। যেটি রচিত হয়েছিল ছাত্রনেতা আসাদ এর মৃত্যুকে উপজীব্য করে। আসাদ ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
কবিতা লিখে জেলে যেতে হয়েছিল বিদ্রোহী কবি খ্যাত কাজী নজরুল ইসলামকে। আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটির জন্য কবির এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল।
আমাদের দেশের বেশকিছু কবিতা আছে যা কালজয়ী। নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হল’, শামসুর রাহমান এর ‘স্বাধীনতা তুমি’, হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পদাকীয়’, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’, মহাদেব সাহা এর ‘দেশপ্রেম’।
কিছু কবিতা আছে যা একই সাথে আলোচিত ও সমালোচিত। কবি রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ তেমনই একটি কবিতা । দাউদ হায়দার এর “জন্মই আমার আজন্ম পাপ” বিখ্যাত একটা কবিতা ।
কবিতা লেখার কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। একজন কবি চাইলে যে কোন স্টাইলে লিখতে পারেন। সব কবিতা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে তাই বলে কবিরা কি না লিখে থাকতে পারেন?
বাংলাধারা/এফএস/এআর