বাংলাধারা প্রতিবেদন »
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী বছরে আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি হলেই আয়কর দিতে হবে। কিন্তু কোন কোন খাত থেকে অর্থ পেলে তা আয় হিসেবে বিবেচনা হবে, আর কোন খাত থেকে পেলে আয় হিসেবে ধরে কর দিতে হবে না, তার কিছু হিসাব-নিকাশ আছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি করা “ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার রিটার্ন পূরণ ও কর পরিপালন” নির্দেশিকায়। তাতে করযোগ্য আয় থেকে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে কর রেয়াত পাওয়ার সুযোগও রয়েছে।
★ বেসরকারি চাকরিজীবীদের করযোগ্য আয়
সাধারণভাবে একজন চাকরিজীবী করদাতার পাওয়া মূল বেতন, উৎসব ভাতা, পরিচারক ভাতা, সম্মানী ভাতা, ওভারটাইম ভাতা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তার দেওয়া চাঁদা ও বিভিন্ন পারকুইজিট (সুবিধা) বেতন খাতের করযোগ্য আয়।
সরকারি বেতন আদেশভুক্ত চাকরিজীবী ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে এক বছরে পাওয়া মোট মূল বেতন, উৎসব ভাতা, বিশেষ বেতন, মহার্র্ঘ ভাতার শতভাগ করযোগ্য আয়। ছুটি নগদায়নের সম্পূর্ণ অর্থ করযোগ্য। নগদ বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বা মাসে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম, সেটি করমুক্ত। নগদ পাওয়া চিকিৎসা ভাতার মধ্যে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম, তা করমুক্ত। যাতায়াত ভাতার মধ্যে বছরে ৩০ হাজার টাকা করমুক্ত। স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে অর্জিত সুদের পরিমাণ মূল বেতনের তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত অথবা সরকার নির্ধারিত হারের মধ্যে যেটি কম, তা করমুক্ত।
যদি করদাতা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিয়োগকর্তার কাছ থেকে গাড়ি পান, তাহলে মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা বছরে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি, তা করযোগ্য আয় হবে। নিয়োগকর্তা চাকরিজীবীকে বিনা ভাড়ায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে মূল বেতনের ২৫ শতাংশ করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
করদাতা নিয়োগকর্তা থেকে কম ভাড়ায় বাসস্থান পেলে মূল বেতনের ২৫ শতাংশ হতে প্রকৃত পরিশোধিত ভাড়া বাদ দিয়ে বাকিটা করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। গ্রাচ্যুইটি বাবদ পাওয়া আড়াই কোটি টাকার অতিরিক্ত অর্থ করযোগ্য। শ্রম আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেশন ফান্ড থেকে কোনো ব্যক্তির পাওয়া ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
★ রিটার্নের সঙ্গে যেসব তথ্য দিতে হবে
সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিলের জন্য করদাতার ১২ ডিজিটের টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যক্তি করদাতা রিটার্ন দাখিলের আগে নিজেই এনবিআরের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে আবেদন করে ১২ ডিজিটের ই-টিআইএন সংগ্রহ করতে পারবেন।
করদাতা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কার্যালয় বা কর তথ্যসেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারবেন। রিটার্নের সঙ্গে বিভিন্ন উৎসের আয়ের সপক্ষে প্রমাণাদি বা বিবরণ দাখিল করতে হয়। এ ক্ষেত্রে করদাতা চাকরিজীবী হলে তার বেতন বিবরণী, ব্যাংক হিসাব থাকলে বা ব্যাংক সুদ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক সার্টিফিকেট, বিনিয়োগ ভাতা দাবি থাকলে তার সপক্ষে প্রমাণ। যেমন জীবন বীমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রমাণ।
নিরাপত্তা জামানতের সুদ খাতে বন্ড বা ডিবেঞ্চার যে বছরে কেনা হয়, সেই বন্ড বা ডিবেঞ্চারের ফটোকপি, সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্র্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা হলে ঋণের সুদের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র। বাড়ি ভাড়ার সমর্থনে ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার রসিদের কপি, মাসভিত্তিক বাড়ি ভাড়া পাওয়ার বিবরণ ও বাড়ি ভাড়া জমা দেওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাব বিবরণী, পৌরকর, সিটি করপোরেশন কর, ভূমি রাজস্ব দেওয়া রসিদের কপি।
মূলধনী লাভের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় হলে তার দলিলের কপি, উৎসে আয়কর জমা হলে তার চালানের কপি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে মুনাফা হলে এ-সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র। এ ছাড়া নগদ লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টির কপি, সঞ্চয়পত্র থেকে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় বা সুদ পাওয়ার সময় নেওয়া সার্টিফিকেটের কপি, ব্যাংক সুদ আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/বি