সকালের মিষ্টি রোদ আর দখিনা বাতাসে স্নাত চট্টগ্রামের চারুকলা প্রাঙ্গণ। শিল্পের ক্যানভাসে যেন বসন্ত ছুঁয়ে আছে আপন মায়ায়। রংতুলি হাতে তরুণ-তরুণীরা আনমনে মিশিয়ে চলেছেন রঙের ঢেউ—কেউ রঙ করছেন, কেউবা কাঠের ফ্রেম বাঁধছেন। এ যেন কেবল শিল্প নয়, বরং বৈশাখকে বরণ করে নেওয়ার এক আনন্দময় আয়োজন।
চট্টগ্রাম নগরের বাদশা মিয়া সড়কের শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারি চত্বর জুড়ে এখন শুধু ব্যস্ততা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে প্রাণভরে। আর মাত্র দুদিন বাকি পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরের সূচনায় এই শোভাযাত্রাই যেন হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের প্রাণ।
ঈদের ছুটি শেষে কেউ বিরতি নেয়নি। কাঠ, কাগজ, রঙ আর ক্যানভাসে ব্যস্ত হাতে তৈরি হচ্ছে বাঘ, পাখি, মাছসহ নানান লোকজ প্রতীক—সব কিছুর মাঝেই এক প্রাণের স্পন্দন। প্রতিটি রঙ, প্রতিটি ছোঁয়া যেন বলে দিচ্ছে এ উৎসব কেবল আনন্দের নয়, এটি একতার, সংস্কৃতির আর শিল্পের মিলনমেলা।
শিক্ষার্থীরা জানালেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের কাছে শুধু একদিনের উৎসব নয়। এটা আমাদের শিল্পচর্চা, আমাদের ঐতিহ্য আর ভ্রাতৃত্বের প্রকাশ। তাই আমরা ভালোবাসা দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
এবারের বর্ষবরণে থাকছে নানা নতুন আয়োজন। নতুন বছর, বাংলা ১৪৩২-র আগমন। শেষ বিকেলের আলোয় মুখোমুখি আমরা এক নতুন প্রত্যাশার—এ বছর বাঙালির জীবনে আসুক বৈষম্যহীন ভ্রাতৃত্ব আর শিল্পস্নাত মানবতা।
বর্ষবরণে চট্টগ্রামে যত আয়োজন….
প্রতিবারের মতো এবারও ডিসি হিলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ‘সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদ’। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এই আয়োজনে অংশ নেবে ৫০টিরও বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন। লোকজ ঐতিহ্য, নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি ও নাট্য পরিবেশনার মাধ্যমে উদ্যাপন করা হবে বাঙালির প্রাণের উৎসব। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এ বছর অনুষ্ঠানটি ৪৭ বছরে পদার্পণ করেছে। করোনা-পূর্ব সময়ে এটি ছিল দুই দিনব্যাপী, তবে বর্তমানে তা একদিনেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের আয়োজিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। প্রতিবারের মতো এবারও সকাল ৯টার দিকে চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটি চট্টেশ্বরী মোড়, আলমাস মোড়, কাজীর দেউড়ি, এসএস খালেদ রোড, প্রেস ক্লাব ইউটার্ন, সার্সন রোড ঘুরে আবার চারুকলায় ফিরে আসবে। সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চে থাকবে সাংস্কৃতিক আয়োজন, যেখানে স্থানীয় শিল্পীরা অংশ নেবেন।
এআরই/বাংলাধারা