আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ১৮ বছর পার করে ফেলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। খেলেছেন প্রায় সাড়ে চারশ ম্যাচ। উইকেট শিকার করেছেন সাতশর বেশি। দীর্ঘ এই ক্রিকেটীয় জীবনে কখনোই তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। তবে ক্যারিয়ারের একদম শেষ প্রান্তে এসে প্রশ্ন উঠেছে সাবেক নম্বর ওয়ান অলরাউন্ডারের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থেকে শুরু করে সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই বোলিংয়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন সাবেক বাংলাদেশি অধিনায়ক। পরবর্তী বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা উতরে না যাওয়া পর্যন্ত শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতে পারবেন এই অলরাউন্ডার।
ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাকিব বাংলাদেশ জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। অনানুষ্ঠানিক খবর অনুযায়ী, চেন্নাইয়ে দেয়া বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষাতেও ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব আল হাসান। তার আগে ব্যর্থ হয়েছিলেন বার্মিংহামে দেয়া পরীক্ষায়। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, পরপর দুই পরীক্ষায় বোলিং অ্যাকশন ত্রুটিযুক্ত হলে এক বছরের মধ্যে ওই বোলার বল করতে পারবেন না।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিবের থাকা, না থাকা নিয়ে যখন দেশের ক্রিকেটে আলোচনা, তখন কিনা দুশ্চিন্তা বাড়ালো টাইগার অলরাউন্ডারের বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার ফলাফল। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো কিছু নিশ্চিত নয়। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে খবর এসেছে, চেন্নাইয়ে দেয়া বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষাতেও ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব।
টাইগার অলরাউন্ডারকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে রাখার বিষয়ে বুধবার (৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ‘সাকিবের ব্যাপারে (বোর্ড থেকে) কোনও নির্দেশনা আসেনি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি এটা একটু শকিং।’
বার্মিংহামে দেয়া পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর গত ২১ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে ফের বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন সাকিব। এতদিনে ফলাফলও চলে আসার কথা। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো খবর আসেনি।
কিন্তু অনানুষ্ঠানিক খবরটি যদি সত্যি হয় তাহলে আইসিসির অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের নিয়ম বলছে, আগামী এক বছর কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন না সাকিব। এ সময়ের মধ্যে অ্যাকশন শোধরানোর পরীক্ষাও আর দিতে পারবেন না। অবশ্য নিয়ম অনুযায়ী, যদি নির্দিষ্ট কোনো ডেলিভারিতে সমস্যা থাকে তাহলে ওই ডেলিভারি বাদ দিয়ে বল করে যেতে পারবেন তিনি। পরীক্ষায় ত্রুটি ধরা পড়া সে ডেলিভারি শোধরানোর আগ পর্যন্ত তিনি ম্যাচে তার প্রয়োগ করতে পারবেন না। ম্যাচে যদি ত্রুটিপূর্ণ ডেলিভারিটি করেন, তাহলে এক বছরের জন্য বোলিংয়ে নিষিদ্ধ হবেন। তবে এ সময়ে তিনি ব্যাটার হিসেবে খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন। এক বছর পর ফের আইসিসি স্বীকৃত পরীক্ষাগার থেকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলে বোলিংয়ে আর কোনো বাধা থাকবে না।
১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়ানো সাকিবের বোলিং নিয়ে প্রশ্ন উঠে গত সেপ্টেম্বরে। ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সমারসেটের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন টাইগার অলরাউন্ডার। ওই ম্যাচে তার দল ১১১ রানে হারলেও দারুণ বোলিং করেছিলেন সাকিব। ৬৩ ওভার বোলিং করে ৯ উইকেট নেন তিনি। ম্যাচশেষে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রতিবেদন জমা দেন ম্যাচ অফিশিয়ালরা। নিজের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সংশয় দূর করতে ২ ডিসেম্বর বার্মিংহামের অদূরে লাফবরো ইউনিভার্সিটির মেডিকেল বিভাগে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন। সেখানে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হলে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) পরিচালিত সব ধরনের ক্রিকেটে তার বোলিং নিষিদ্ধ করা হয়। তাতে আন্তর্জাতিক-সহ সব ধরনের ঘরোয়া লিগেও তার বোলিং নিষিদ্ধ হয়। কারণ আইসিসির নিয়মানুযায়ী, কোনো স্বীকৃত পরীক্ষাগার থেকে বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা দেয়ার পরে অবৈধ প্রমাণিত হলে, সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই আন্তর্জাতিক ও অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্টে কার্যকর হবে।
আপাতত চেন্নাই থেকে আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়ার অপেক্ষা। সেখানেও অ্যাকশন ত্রুটিযুক্ত প্রমাণিত হলে পরবর্তী পরীক্ষা দিতে সাকিবকে অপেক্ষা করতে হবে এক বছর। অবশ্য আইসিসির বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যদি বোলারের মনে হয় তার অ্যাকশন পরীক্ষার রিপোর্ট ত্রুটিপূর্ণ, তাহলে এ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ আছে।