কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও খাদ্যপণ্যের দোকান মালিকদের নিয়ে হোয়াটসএপ গ্রুপ খুলে সে গ্রুপে অভিযান পরিচালনার অগ্রিম তথ্য প্রদান, বিভিন্নভাবে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা উপায়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় কর্মরত স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। ‘কর্ণফুলী ফুড এন্ড বেকারি এসোসিয়েশন’ নামের ওই হোয়াটসএপ গ্রুপের মাধ্যমেই উপজেলার চব্বিশটি বড় খাদ্য কারখানাসহ তিন শতাধিক খাদ্যপণ্যের দোকান থেকে মাস শেষে আদায় করেন মাসোহারাও।
কর্ণফুলী উপজেলার ব্যবসায়ীরা জানান, মাসের শেষদিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাসোহারা আদায় করেন মনোয়ারা বেগম। এসময় তার সাথে সহযোগী হিসেবে থাকেন রায়হান নামের এক কিশোর। এসময় চাঁদার টাকা না পেলে দেখান অভিযানের ভয়। যে প্রতিষ্ঠান তার চাহিদামতো মাসিক চাঁদা দিতে রাজি হয় না, সে প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে অভিযান চালান তিনি।
নামকরা রেস্টুরেন্ট বেকারীর পাশাপাশি এ স্যানেটারি ইন্সপেক্টরের চাঁদাবাজির হাত থেকে বাঁচতে পারেনি গ্রামের চায়ের দোকানদারও। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে ভুয়া স্বাস্থ্যসনদ প্রদানসহ উপজেলার কয়েক শতাধিক দোকানপাট ও হোটেল মালিকদের কাছ থেকে প্রিমিসেস লাইসেন্সের নামে রসিদ ছাড়া অর্থ নেয়ার অভিযোগও রয়েছে মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে।
এটুকুতে থেমে নেই মনোয়ারা বেগমের চাঁদাবাজি। বিভিন্ন জাতীয় দিবস ঘিরেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করেন চাঁদা। ‘কর্ণফুলী ফুড এন্ড বেকারি এসোসিয়েশন’ গ্রুপের এক স্ক্রীনশটে মেলে তারও প্রমাণ। সেখানে দেখা যায় গত ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে তিনি গ্রুপের সবার কাছ থেকে দুই হাজার করে চাঁদা নিয়েছেন। চাঁদা হিসেবে তিনি নগদ টাকার পাশাপাশি নেন খাদ্যপণ্য এমনকি শুটকি মাছও।
একই গ্রুপের অপর এক স্ক্রীণসটে দেখা যায় সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ায় এ খাদ্য পরিদর্শক ক্ষেপেছেন ব্যবসায়ীদের ওপর। সেখানে তিনি লিখেন, ‘আপনারা কিছু কিছু অনলাইন সাংবাদিকগণকে আমার বিরুদ্ধে লিখিয়েছেন। তাতে কি হবে বলেন, আমি চলে গেলে অন্যজন আসবে। বিএসটিআই আসবে, ভোক্তা অধিকার আসবে, পরিবেশ আসবে, ফায়ার সার্ভিস আসবে, ভ্যাট আসবে। অবশেষে শহর থেকে নিরাপদ খাদ্য অফিসার আসবে। উনারা সবাই আমার কাছে লিস্ট চাচ্ছে। আমি দিয়ে দিব। আমি মোবাইল কোর্টে নাইবা থাকলাম। এবার আপনাদের জবাবদিহিতা আপনারা করেন- আমার সমস্যা নেই।’’
স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মনোয়ারার পরিচালিত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে কর্ণফুলীর নামি-দামি খাদ্য কারখানা ও প্রতিষ্ঠান মালিক যুক্ত রয়েছেন। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মাসুদ এগ্রো (বাংলাবাজার ঘাট), কিষোয়ান (কর্ণফুলী), বনফুল (মইজ্জ্যারটেক-ব্রিজঘাট), জে.বি. ওয়েল (চরপাথরঘাটা), স্মার্ট গ্রুপ (বোর্ড বাজার), নূর সুইটস (মইজ্জ্যারটেক), তিস্তা ফুড (তোতার বাপের হাট), মিষ্টিমেলা (সিডিএটেক) রসালো (সৈন্যেরটেক), ইয়াছিন বেকারি (কর্ণফুলী), হাসান বেকারি (জুলধা পাইপের ঘোড়া), ফ্রেশ এন্ড সেইফ (ব্রিজঘাট), বগুড়ার দই (মইজ্জ্যারটেক), আধুনিক বেকারি (কলেজ বাজার), বার আউলিয়া বেকারি (কর্ণফুলী), আনোয়ার বেকারি (মাস্টার হাট), ইলিগান বেকারি (টুলবক্স), হোসেন ফুড (সৈন্যেরটেক), আয়েশা বেকারি (খুইদ্যারটেক), মায়ের দো’আ (কর্ণফুলী), আলিফ বেকারি (বিএফডিনি রোড), নয়ন বেকারি (তোতারবাপের হাট), আনোয়ার পুষ্টি বেকারি (টুলবক্স), টুস্টার বেকারি (কালাইয়্যার দোকান), কর্ণফুলী বেকারি (ওভারব্রিজ) ও নুরী বাবা বেকারি (বোর্ড বাজার)।
মনোয়ারা বেগম ২০১৯ সালে থেকে কর্ণফুলী উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একজন স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের কাজ উপজেলা ভিত্তিক খাদ্য স্থাপনা পরিদর্শন, দৈনন্দিন রিপোর্ট প্রদান, খাদ্য নমুনা সংগ্রহ ও ল্যাবে প্রেরণ, নমুনা ভেজাল হলে আদালতে মামলা দায়ের, পচা-বাসি ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য জব্দ এবং ধ্বংস করা, সংক্রামক ছোঁয়াচে রোগের কারণ অনুসন্ধান, স্কুল ও কমিউনিটিতে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন না করে মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপজেলার বিভিন্ন হোটেল ও বেকারিতে গিয়ে কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দেখানো এবং লাইসেন্সের কথা বলে মালিকদের কাছ থেকে রসিদ ছাড়া মোটা অংকের টাকা আদায় করার।