বিশেষ প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামের ব্রিটিশ হ্যারিটেজ খ্যাত সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি)। সুবিশাল এই দফতর থেকে সিভিল ডিফেন্স শাখা (দমকল) সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা হচ্ছে। ফলে যে কোন সময় অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে প্রাণহানিসহ মূল্যবান কাগজপত্র ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাঁই হওয়ার পাশাপাশি ব্রিটিশ এই হ্যারিটেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। ফলে আতঙ্কে কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিভিন্ন কাজে আসা নারী-পুরুষ। কিন্তু মহাপরিচালকের (ডিজি) দফতরের নির্দেশক্রমে সিভিল ডিফেন্স শাখাটি বিলুপ্তির জন্য সুপারিশ করা হলেও জানেন না বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেন।
অভিযোগ উঠেছে, সিআরবি ভবনে প্রায় ১৮টি দফতর রয়েছে। প্রত্যেকটি দফতরের সামনে এবং উর্ধতন কর্মকর্তাদের কক্ষগুলোর দরজার পাশে পাশে স্টিংগুশার ঝুলানো রয়েছে। কয়েকটি স্টিংগুশারের পাশে আবার তিনটি করে বালির বালতি রয়েছে। অথচ, প্রত্যেকটি স্টিংগুশারের সঙ্গে বালির বালতি রাখার কথা থাকলেও তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। উল্টো এ দফতরগুলোকে আতঙ্কের মুখে রাখতে সিভিল ডিফেন্স শাখাটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা হচ্ছে। অথচ এর বিপরীতে সরবরাহকারিদের কাছ থেকে প্রতি বছর স্টিংগুশার ক্রয় ও রিফুয়েলিংয়ের মাধ্যমে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে। এতে রাজস্ব আয়ের অনেকাংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, সরবরাহকারিদের কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে এসব স্টিংগুশার ক্রয় করা হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর স্টিংগুশার রিফুয়েলিং করা হয় বিনা টেন্ডারে। একচেটিয়াভাবে কয়েক সরবরাহকারি এ ধরনের ক্রয়কে লিমিটেড (এলটিএম) টেন্ডার করায় সরকারকে উচ্চমূল্যে স্টিংগুশার রিফুয়েলিং করতে হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। এদিকে, এ দফতরটি বিলুপ্ত করা হলে স্টিংগুশার ক্রয়ের সংখ্যাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। শুধু স্টিংগুশার ক্রয় ও দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু স্টিংগুশারের পিন যদি কোনভাবে মরিচা পড়ে তাহলে ছিদ্র হয়ে স্টিংগুশারের আগুন নির্বাপন ক্ষমতা হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হলেও কেউ এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব স্টিংগুশার ব্যবহারে কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোন ধরনের প্রশিক্ষণ না দেয়ায় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলে তা সামাল দেয়া দুস্কর হয়ে পড়বে। অথচ, চট্টগ্রামস্থ বিভিন্ন সরকারি দফতরে কিছুদিন পর পর ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরে কর্মরতদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলাধারা প্রতিবেদককে বলেন, এ দফতরে ফায়ার ডিফেন্স শাখা রয়েছে তা আমারও জানা ছিল না। তবে বিলুপ্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টিও আমার জানা নেই। যদিও সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তখন আমি এ দফতরে কর্মরত ছিলাম না।
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে এ দফতরটি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। স্বাধীনতার পর জনবল কাঠামো বৃদ্ধি করে দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছর অতিবাহিতের পর এ দফতরটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবনা । তবে প্রেরিত সুপারিশে সিআরবিস্থ অন্যান্য দফতরগুলোতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, অগ্নিনির্বাপনের জন্য যদিও এ দফতরটিতে এখন কোন স্টিংগুশার ছাড়া আর কোন কিছুই কার্যকর নেই। শোপিচের মত ঝুলানো রয়েছে অগ্নিনির্বাপন পাইপ। এসব পাইপ দিয়ে ভবনের বিভিন্ন দফতরে সংযোগ থাকলেও সেগুলো অকার্যকর হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।
সিআরবিস্থ সিভিল ডিফেন্স শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান বেতন কোডের ষষ্ঠ থেকে বিশতম বেতন স্কেলে এ বিভাগে মোট ১২৩টি পদ রয়েছে। জনবল কাঠামো অনুযায়ী ১২৩টি পদের প্রত্যেকটি বিলুপ্তির জন্য প্রস্তাবনা ও সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ দফতরে কর্মরত ছিলেন সিভিল ডিফেন্স ও স্কোয়াড অফিসার, চিফ ইন্সপেক্টর সিভিল ডিফেন্স, ফায়ার ব্রিগেড ইন্সফেক্টর, সিভিল ডিফেন্স ইন্সপেক্টর ৯ জন, একজন স্টোর টেন্ডল গ্রেড-১, একজন স্টোর টেন্ডল গ্রেড-২, মোটর মেকানিক ৮ জন, ক্লার্ক পেট্রোলিং ড্রাইভার ১৬ জন, ফায়ার লিডার ১৪ জন, একজন কুটির মেরামতকারী, ৫৬ জন ফায়ার ফাইটার, ৭ জন লাইন ইলেকট্রিশিয়ান, একজন অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, রাত্রিকালীন সময়ের জন্য ২ জন নিরাপত্তা প্রহরি, একজন ফেন্সিং খালাসি, একজন খালাসি ও ২ জন উচ্চমান সহকারি। এ বিভাগটিতে মোট ১২৩ জন জনবল কাঠামো থাকলেও পুরোটাই বিলুপ্তির জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর