বাংলাধারা ডেস্ক »
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় রাজশাহীতে ‘বড় ভাইয়ের বদলে’ গ্রেপ্তার হওয়া ডাব বিক্রেতা সজল মিয়াকে (৩৪) দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১২ জুন) বিকেল ৩টার দিকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (প্রথম) বিচার মো. মনসুর আলম এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে আসামি না হয়েও কেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি হিসেবে সজলকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো তার জন্য মহানগরীর শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। জানা যায়, সজলের বাড়ি মহানগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকায়। বাবার নাম তোফাজ উদ্দিন। সজলের বড় ভাইয়ের নাম সেলিম ওরফে ফজল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ২০০৯ সালে ফজলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার পর থেকেই তিনি পলাতক।
গত ৩০ এপ্রিল সজলকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এরপর ফজল হিসেবে সজলকে কারাগারে পাঠানো হয়। সজলকে যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয় তখন তার নাম ফজল বলেই পুলিশের গ্রেপ্তারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দুইজন সাক্ষী এ ব্যাপারে এফিডেভিট করে দেয়ায় তাকে সেদিন কারাগারে পাঠানো হয়।
কিন্তু গত ২৬ মে সজল আসামি নন দাবি করে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য আবেদন করেন। এরপর মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। এ দিন আদালত না বসায় পরদিন আবারও শুনানি হলো। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর আজ অব্যাহতি পান সজল। আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর।
এছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন তার শারীরিক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়। এখন আবার পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রেফতার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। পুলিশ ভুল করে তাকে ফজল ভেবে গ্রেফতার করেছে।
এই দিন সজলের ছয় ভাই-বোন আদালতে এফিডেফিট করে জানান, যে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘদিন ধরেই নিখোঁজ রয়েছেন। তারা ফজলের কোনো খোঁজ জানেন না। তিনি বেঁচে আছেন কিনা তারা সেটিও জানেন না। আর ফজল হিসেবে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি আসলে সবার ছোট ভাই সজল। এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সজলকে বুধবার এই দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর জন্য ওসির শাস্তির বিধান রয়েছে।
কিন্তু এখানে দুজন সাক্ষী ওসিকে এফিডেভিট করে দিয়ে বলেছিলেন, এটাই আসামি। তাই ওসির জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। অবশ্য আগের দিন শুনানির জন্য আদালতে আনা হলে হাজতে ঢোকানোর সময় সজল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই দিন তিনি বলেন, ‘কোনো দোষ করিনি। আমি আসামি না। তারপরেও আমি কয়েদি!’ সজল বলেন, ‘পুলিশ আমাকে বিনাদোষে জেলে পাঠিয়েছে। জেলে কয়েদি হিসেবে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে হয়। বিনাদোষে এসব সহ্য করতে হচ্ছে।’
সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বলেন, অপরাধী না হয়েও সজল কয়েদি হিসেবে সাজা ভোগ করেছেন। তার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। ওসির শোকজের জবাব পাওয়ার পর আদালত এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দেবেন সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তারপর প্রয়োজনে মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ভুক্তভোগী সজলের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করে আদালতে আবেদন করব।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/এসবি