বাংলাধারা ডেস্ক »
পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার যে অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে, তার ২০ শতাংশ যোগান দেয় এই রহস্যে ঘেরা বন আমাজন। যে কারণে এই আমাজন বনকে বলা হয় ‘পৃথিবীর ফুসফুস’। সেই অরণ্য এখন নিঃশেষ হচ্ছে ভয়াবহ এক দাবানলে।
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্স (ইএনপিই) বলছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত অমাজানের ব্রাজিল অংশে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় যা ৮০ শতাংশ বেশি এবং ২০১৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
সংস্থাটির হিসাব মতে, দাবানলে প্রতি মিনিটে আমাজন প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকা পুড়ে যাচ্ছে। এভাবে পুড়তে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী আন্দোলনে বিশাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা।
এদিকে, আমাজন বনাঞ্চলে চলতি বছরের রেকর্ড সংখ্যক অগ্নিকাণ্ডকে ‘আন্তর্জাতিক সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ।
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি জি-৭ সম্মেলনের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। টুইটারে ম্যাখোঁ লিখেছেন, আমাদের বাড়িঘর জ্বলছে।
ম্যাখোঁর এ মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরো। ম্যাখোঁ ‘রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য আমাজনের অগ্নিকাণ্ডকে ব্যবহার করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
জি-৭ সম্মেলনে ব্রাজিল অংশ না নেওয়ায় সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা ‘ভুল স্থানে’ উপনিবেশবাদী মানসিকতার পরিচয় বলে মন্তব্য করেন বোলসোনেরো।
ইমপে’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে সব মিলিয়ে ৭৫০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে আপাতত যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা থেকে মনে করা হচ্ছে যে, আমাজন বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার এই হার তিন গুণ বেড়ে গেছে। শুধু গত মাসেই ২২০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল পুড়ে গেছে, যা গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ২৮০ শতাংশ হারে বেশি।
পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন, আমাজন জঙ্গলসংলগ্ন আমাজোনাস ও রোনডোনিয়া রাজ্যের বনাঞ্চলে লাগা আগুনের ধোঁয়া দুই হাজার ৭০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে সাও পাওলোতে এসে পৌঁছেছে। এ সপ্তাহের প্রায় প্রত্যেক দিন দুপুর ৩টার পর থেকে ঘণ্টাখানেকের জন্য শহরটি অন্ধকারে ডুবে ছিল বলে জানা গেছে।
৭০ লাখ বর্গ কিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই জঙ্গলের প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯টি দেশ জুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত। আমাজন জঙ্গলের ৬০ ভাগ ব্রাজিলে, ১৩ ভাগ পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানায়। এই গহীন অরণ্যে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড় আছে। এছাড়া ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। এছাড়া আমাজন নদীতে ৩ হাজার প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী আছে। এই বন প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর