ksrm-ads

২৫ মে ২০২৫

ksrm-ads

মতিউর স্ত্রী লায়লার যতো ধনসম্পদ

শিক্ষকতা থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া লায়লা কানিজের শুধু ব্যাংকে নগদ জমা আছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া ও আছে রিসোর্ট, খামারসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ। সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে তিনি কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী। এনবিআরের সদস্য ড. মতিউরের আলাদিনের চেরাগেই আলোকিত তার স্ত্রী। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে থাকাকালীন সময়ই এই আলাদিনের চেরাগ হাতে পান। তখন চট্টগ্রাম বন্দরে আসা আমদানি পণ্যের সাতটি চালানে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ে। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেন বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিয়োগ করা সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি। ওই সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ছিলেন ড. মতিউর রহমান। এ সময়ে শুল্ক কর ও জরিমানাসহ সাড়ে চার কোটি টাকা আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেন দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা হাতিয়ে নেয় মতিউর রহমানের সিন্ডিকেট। এভাবে কয়েকটি অভিযান চালিয়ে মতিউর রহমান কাস্টমসের হিরো বনে যান। কিন্তু গোপনে তার বানানো সিন্ডিকেট চলমান রাখেন। এভাবেই তিনি হয়ে যান শতকোটি টাকার মালিক।

সাম্প্রতিক সময়ে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কাণ্ডের পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক মতিউরের কাহিনী। ড. মতিউর এনবিআর সদস্য হিসেবে কাস্টম ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকির আয় ও সম্পদের অসঙ্গতি তদন্ত হওয়া জরুরি। রাষ্ট্রের তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো এর দায় এড়াতে পারে না।

জানা গেছে, আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি। পেশায় শিক্ষক ছিলেন। তবে নংরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মারা গেলে পুরোপুরি রাজনীতিবিদ হয়ে যান লাকি। তিনি সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন রাজুর আস্থাভাজন হিসেবেও এলাকায় পরিচিত। ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে স্থানীয় নেতাদের টপকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তিনি। আরো পাঁচজন প্রার্থী হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন চারজন। আরেকজনের প্রার্থিতা বাতিল হলে লায়লা কানিজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও প্রার্থী হন লায়লা কানিজ লাকি। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়- বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা ভাড়া পান লায়লা কানিজ, তবে তার কোনো ব্যবসা নেই। শেয়ারবাজার থেকে আয় করেন সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি। কৃষি খাত থেকে বছরে সবচেয়ে বেশি আয় (১৮ লাখ টাকা) করেন তিনি। অথচ কৃষি জমি দেখিয়েছেন মাত্র ১৫৪ শতাংশ।

এদিকে, মাসে গড় আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা হলেও কোটিপতি লায়লা কানিজ। বর্তমানে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই জমা আছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। ঢাকায় দুটি ফ্লাটের মালিক তিনি, যার একটির মূল্য দেড় কোটি টাকা। রয়েছে রাজউকের পাঁচ কাঠার প্লট, সাভারে সাড়ে আট কাঠার প্লট, গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে আটটি প্লট, নরংসিংদীতে নয়টি ও যশোরে ১৫ কাঠার প্লট। এর কোনোটির মূল্য নিজেও জানেন না বলে হলফনামা উল্লেখ করেন তিনি। এতসব সম্পত্তি থাকলেও লায়লা কানিজের কোনো ব্যাংক ঋণ বা দেনা নেই। এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে ফোন করা হলেও ধরেননি তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লাকি রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। একই সঙ্গে রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ২০২৩ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান মারা গেলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এবং অবৈধ টাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।

তার নির্বাচনী হলফনামা থেকে আরো জানা গেছে, লায়লা কানিজ বার্ষিক আয় করেন- বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, কৃষি খাত থেকে ১৮ লাখ টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫ টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, তার অকৃষিজমির মধ্যে রয়েছে- রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ।

সরেজমিন দেখা যায়- রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজ দম্পতির কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত আধুনিক স্থাপত্যের ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাড়িটির ভেতরে রাজকীয় সব আসবাবপত্র ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে।

লাকির ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্টে গিয়ে দেখা গেছে, দেড় একরের বেশি আয়তনজুড়ে পার্কটির অবস্থান। ভেতরে রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক কটেজ। নির্ধারিত টাকায় এ কটেজে রাত্রিযাপন করা যায়। এছাড়া পার্কে রয়েছে বিভিন্ন বয়সীদের জন্য বেশকিছু রাইড। পার্কজুড়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য ও স্থাপনা এবং বিশাল আয়তনের একটি লেক। স্থানীয়দের কাছে এগুলো লাকির পার্ক বলে পরিচিত।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ