কক্সবাজার প্রতিনিধি »
আগে জলদস্যু, পাহাড়ি সন্ত্রাসী, চিহ্নিত ডাকাত অপরাধ জীবন ছেড়ে রাষ্ট্রের কাছে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করলেও অস্ত্র তৈরীর কারিগর আত্মসমর্পণ করার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। কিন্তু শনিবার (২৩ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো আত্মসমর্পণ করছেন মহেশখালীর অস্ত্র তৈরীর খ্যাতনামা ডজনাধিক কারিগর। ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য সেভহোমে আসা অপরাধীদের মাঝে অস্ত্রের শীর্ষ কারিগর জাফর আলমসহ আরো ১২ জন অভিজ্ঞ ও দক্ষ কারিগর রয়েছে।
সেইফহোমে আসা এক অস্ত্র কারিগর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহেশখালীতে তৈরী হওয়া অবৈধ অস্ত্রের গায়ে ‘Made in Zafor’ লেখা থাকলে এর দাম অন্য কারিগরদের তৈরী অস্ত্রের চেয়ে দাম বেশীই নেয়া হতো। তারমতে, ‘জাফর’র কারখানায় তৈরি অস্ত্র সারাদেশে সরবরাহ করা হতো।
সুত্রমতে, শীর্ষ অস্ত্রের কারিগর ও জলদস্যুরা দেড় শতাধিক অবৈধ অস্ত্র, প্রায় ২ হাজার গোলাবারুদ, ধারালো ভয়ংকর অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামসহ আত্মসমর্পণ করবেন।
মহেশখালীর কালারমারছরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কক্সবাজার জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় সকালে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান চলবে। এতে অস্ত্র তৈরীর শীর্ষ কারিগরসহ জলদস্যু, দাগী অপরাধী, বহু মামলার পলাতক আসামীরা আত্মসমর্পণ করবেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী উপস্থিত থাকবেন। শনিবার সকাল ৯ টার ফ্লাইটে কক্সবাজার পৌছে তারা সার্কিট হাউসে অবস্থান নিয়ে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের সামগ্রিক বিষয়াবলী জ্ঞাত হবেন। এরপর স্পীডবোট যোগে কালারমারছরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন।
আত্মসমর্পণে একমাত্র মধ্যস্থতাকারী বেসরকারি চ্যানেল আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি আকরাম হোসাইন জানান, শীর্ষ অস্ত্রের কারিগরদের কারখানা পর্যন্ত পৌঁছাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের সহযোগিতা ও উৎসাহে এ দুঃসাহসিক কাজে সফল হতে পেরে নিজে তৃপ্তি অনুভব করছি। অশান্ত উপকূলকে শান্ত করতে, এলাকার মানুষকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে বেশী অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত এই মহেশখালী উপজেলার কালামারছরা ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। খুন, রাহাজানি, দস্যূতা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ সব জগন্য অপরাধকর্ম সংগঠিত হওয়া কালারমারছরার জন্য একেবারে নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। মহেশখালীর চিহ্নিত অস্ত্রের কারিগর ও কূখ্যাত বেশ ক’টি জলদস্যু বাহিনীর সর্দার, অস্ত্রের শীর্ষ কারিগর ও বাহিনীর সদস্যরা এদিন স্বদলবলে আত্মসমর্পণ করছেন।
আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে কূখ্যাত খউস্বর বর গ্রুপ, কালারবর গ্রুপ, আইয়ুব বাহিনীসহ ৮ টি পৃথক জলদস্যু বাহিনীর প্রধান, সদস্যরা, অস্ত্রের কারিগরদের সর্দার, দাগী পলাতক আসামীরা আত্মসমর্পণ করতে মধ্যস্থতাকারীর নিয়ন্ত্রণে সেভহোমে চলে এসেছে। এসব কূখ্যাত বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিত কালারমারছরাসহ উপকূলীয় এলাকায় সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন এসব বিষয়ে সাহসের সাথে এখন মুখ খুলতে চেষ্টা করছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, স্থানীয় অন্যান্য সংসদ সদস্যগণ, র্যাবের কর্মকর্তা, বিজিবি’র রিজিওন কমান্ডার, কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা, কালারমারছরার ইউপি চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
প্রসংগত, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে অনুরূপভাবে ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যু আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেখানে ৪৩ জনের মধ্যে আকরাম হোসাইনের একক মধ্যস্থতায় ৩৭ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আত্মসমর্পণকারী মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়ার সমুদ্র উপকূলের ভয়ংকর জলদস্যুরা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিকজীবনে ফিরে এসেছে। আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী ১০২ জন ইয়াবাকারবারী টেকনাফে আত্মসমর্পণ করেছিলো। শনিবারে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অপরােধিদের বিরাট সুযোগ। গত বছরের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে আত্মসমর্পণ করা ৪৩ জন জলদস্যু সরকারের কাছ থেকে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে অনুদান পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে এখন ক্ষুদ্র ব্যবসা বাণিজ্য করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ