কক্সবাজার প্রতিনিধি »
ইয়াবার কারণে সারা দেশে কক্সবাজারের দুর্নাম দূর্ভাগ্যজনক। মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে শৃংখলাবাহিনীর সাথে জনতার সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী সভা সমাবেশ আর মাদকের কুফল সম্পর্কে শ্রেণী কক্ষে বক্তব্য দিতে হবে শিক্ষকদের। সন্তান কোথায় যায় খোঁজ নিতে হবে মায়েদের। মাদক বা ইয়াবা কারবারিরা যতই শক্তিশালী হউক আইনের আওতায় আসবেই। কেউ ছাড় পাবে না। শুধু নিজ অবস্থান থেকে মাদক বন্ধের শপথ নিই।
বুধবার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় আয়োজিত মাদক বিরোধী সমাবেশে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এসব কথা বলেছেন। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামানের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাজারো মানুষকে মাদক বিরোধী শপথ বাক্য পাঠ করান ডিসি।
উপজেলা প্রশাসন ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে আন্তজার্তিক মাদকদ্রব্য অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী দিবস অনুষ্টানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এখনই সময় ইয়াবার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ইয়াবাকারবারিদের সঙ্গে সকল সর্ম্পক ছিন্ন করার। শুধু অভিযান চালিয়ে মাদক বন্ধ করা যাবে না। আর যেন কেউ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত না হয়, সে বিষয়ে শৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বপালন করতে হবে স্বজন ও প্রতিবেশীদের।
ডিসি বলেন, ইয়াবায় জড়িয়ে পলাতক জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরী হচ্ছে। তাদের যাচাই-বাছাই করে বরখাস্তের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর বার্তায় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতিতে অভিযান চলছে উল্লেখ কওে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, আমার খুব খারাপ লাগে, যখন দেশের প্রশিক্ষিত বাহিনীর গুলি দেশের মানুষের উপর ব্যবহার করতে হয়। মাদক নির্মুল করতে গিয়ে শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অনেক কারবারি মারা গেছেন। এটা আমাদের কাম্য নয়। আমি বিশ্বাস করি, গুলি করে মানুষ মেরে ইয়াবা বন্ধ করা যাবে না। ইয়াবা বন্ধ করতে, সবারই সহযোগিতার দরকার।
সভায় কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, দেশের ৫ শতাধিক উপজেলায় ইয়াবার কারণে উখিয়া-টেকনাফ আলোচিত-সমালোচিত। ইয়াবা নির্মুলে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষণা বাস্তবায়নে সীমান্তে জীবনবাজি রেখে কাজ করছে বিজিবি। তবে, এরপূর্ণ সফলতা পেতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, মাদক আমাদের পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতিকে গ্রাস করেছে। কামার, কুমার, কুলি-মজুররা যখন মাদকের টাকায় কোটিপতি হতে শুরু করল তখন এখানকার সৎ, সহজ- সরল মানুষগুলো নিগৃহিত হতে লাগল। যারা এই টেকনাফ শহরকে ঘৃণার শহরে পরিণত করেছে, আমার জেল হোক আর ফাঁসি হোক আমি এই সীমান্তে মাদক নির্মূল করেই ছাড়বো।
টেকনাফের সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাহাম্মদ শাজাহান আলী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ আবিদুল ইসলাম, সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ন‚রুল আলম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কক্সবাজার সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল, পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম।
আর উখিয়ার সভায় বক্তব্য রাখেন উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য আশরাফ জাহান কাজল, উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন নেছা বেবী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউপির চেয়ারম্যান শাহ আলম, পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী, জালিয়া পালং ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সৌমেন মন্ডল, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের, উখিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসাইন সিরাজী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা উপস্থিত ছিলেন।