ksrm-ads

২ ডিসেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

মানুষের নতুন প্রজাতি আবিস্কার; ১, ৪৬, ০০০ বছর পূর্বের ড্রাগন ম্যান!

অ্যান্ড্রোস লিহন »

আবিস্কৃত হয়েছে মানুষের নতুন একটি প্রজাতি। আরও একবারের জন্য প্রমাণিত হয়েছে এ পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রজাতি নয় যারা ঈশ্বরের বিশেষ পর্যবেক্ষণে তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ শূন্য থেকে। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে আমরা বিবর্তিত হয়েছি আর এখনো আমাদের প্রাচীন পূর্বসূরিদের ফসিল বিবর্তনীয় স্মৃতি হিসেবে গ্যালাক্সির এ গ্রহটিতে রয়ে গেছে!

যাইহোক, আবিষ্কৃত প্রাচীন মানুষের এই ফসিলটি সংগ্রহ করেছিলেন হেবেই ইউনিভার্সিটির জিওসায়েন্স মিউজিয়াম। এ পর্যন্ত আমাদের জানা সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের মানুষের মাথার খুলি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ খুলিটি প্রতিনিধিত্ব করেছে নতুন আবিষ্কৃত একটি মানব প্রজাতির যেটির নামকরণ করা হয়েছে Homo Longi অথবা Dragon Man! এ আবিস্কারটি ২৫ জুন ২০১৫ সালে Journal The Innovation এর তিনটি পেপারে প্রকাশিত হয়।

মূলত প্রথম সংগ্রহের পর এ ফসিলটির নাম ছিল Harbin Cranium! হেবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কিয়াং জি বলেন, এ ফসিলটি এ পর্যন্ত পাওয়া মানুষের করোটির সবচেয়ে পরিপূর্ণ ফসিল। এ ফসিলটি এমন অজস্র বিস্তারিত বিবরণ সংরক্ষণ করেছে যা হোমো জিনাসের উদ্ভব এবং হোমো সেপিয়েন্সের উৎপত্তি বোঝার জন্য খুব সুক্ষ্ম ডায়মেনশন লালন করে এবং যে ডেটাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মূলত এই ক্রেনিয়াম বা করোটি আবিষ্কৃত হয়েছিলো ১৯৩০ সালে চীনের হিলংউজিয়াং প্রদেশের হার্বিন শহরে। বিরাট এ মাথার খুলি আধুনিক মানুষের মাথার খুলির সাথে তুলনীয় (Comparable) আকার ধারণ করে। কিন্তু এর মাথা আরো অনেক বড়, এবং প্রায় বর্গাক্ষেত্রাকার চোখের কোটর। পুরু ললাট, প্রশস্ত মুখ এবং বড় আকারের দাঁত। এর মধ্যে সাধারণত প্রত্মতাত্বিক মানব বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। কিয়াং জি বলেন, হার্বিন ক্রেনিয়াম আদিম ও উৎপন্ন চরিত্রগুলোর একটি মোজাইক সংমিশ্রণ প্রদর্শন করছে যা এদেরকে পূর্বে জানা হোমো সেপিয়েন্স থেকে পৃথক করে রেখেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ করোটিটি একজন পুরুষ ব্যক্তির, যার বয়স প্রায় ৫০ বছর, এটি জঙ্গলে বাস করতো, যারা ছিল প্লাবন সমভূমির একটি কমিউনিটির অংশ। চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্স এবং হেবেই GEO ইউনিভার্সিটির প্রাইমেটোলজি ও প্যালিয়ানট্রোপোলোজির প্রফেসর জিজুন নি বলেন, হোমো সেপিয়েন্সের মতোই তারা মামেল ও পাখি শিকার করতো, ফল ও শাকসবজি সংগ্রহ করতো এবং সম্ভবত তারা মাছ শিকারও করতো।

হার্বিনরা ছিলো আকারে মানুষের চেয়ে অনেক বড় এবং যে স্থানে এই খুলিটি পাওয়া গেছে, গবেষকরা সে স্থান স্টাডি করে, বলছেন যে, হোমো লঙ্গি সম্ভবত খুব সংকটজনক ও কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য অভিযোজিত , যে অভিযোজন ক্ষমতা তাদেরকে সমস্ত এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে দিতে পারে।

জিওকেমিক্যাল এনালায়সিস পরিচালনা করার পর গবেষক জি, নি ও তাদের দল এ ফসিলের সময়কাল নির্ণয় করেন। হার্বিন ফসিলটি আজ থেকে প্রায় ১,৪৬, ০০০ বছর পূর্বের। যা এটিকে মধ্য প্লাইস্টোসিনে স্থাপন করে, যে সময়টি ছিলো মানব জাতির মাইগ্রেশনের এক ডায়নামিক যুগ। তারা হাইপোথিসাইস করেন যে, পাইস্টোসিন যুগে সেপিয়েন্স ও হোমো লঙ্গি একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এছাড়াও আমরা এ সময়ের মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে একইসাথে হোমো প্রজাতির মাল্টিপল ইভোল্যুশনারী লিনিয়েজ দেখতে পাই।

ক্রিস্ট স্টিঙ্গার, ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব সায়েন্স এর একজন প্যালিয়ানথ্রোপোলজিস্ট যিনি বলেন, যদি হোমো সেপিয়েন্স সত্যিই পূর্ব এশিয়ায় পৌঁছে যেতো, তবে অবশ্যই তারা হোমো লঙ্গির সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলো এবং আমরা সেই নিখোঁজ গোষ্ঠীটি সম্পর্কে জানিনা, পরবর্তী কালেও হয়তোবা এরা একে অন্যের মুখোমুখি হয়! আমরা যখন সময়ের পেছনের দিকে তাকাই।

গবেষকরা দেখতে পান যে, হোমো লঙ্গি হোমিনিনদের খুবই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এরা খুব গভীরভাবে নিয়ান্ডারথালদের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলো। এটি খুবই সুবিস্তৃতভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, নিয়ান্ডারথাল এ বিলুপ্ত বংশেরই অন্তর্গত যারা আমাদের নিজস্ব প্রজাতির নিকটাত্মীয়। যাহোক তারা বলেন, যে হোমো লঙ্গি হোমো সেপিয়েন্সের প্রকৃত বোনের দল। বিবর্তনীয় বৃক্ষের পূনর্গঠন থেকে আমরা জানতে পারি আমরা নিয়ান্ডারথালের সাথে যে সাধারণ পূর্বসূরি শেয়ার করি, তারা তারও পূর্বে অস্তিত্বশীল ছিলো। হোমো সেপিয়েন্স ও নিয়ান্ডারথালের ভেতরকার যে বিচ্চ্যুতি, হয়তোবা তার আরো অনেক গভীর বিবর্তনীয় ইতিহাস রয়েছে এবং এ গভীরতা আমাদের প্রচলিত বিশ্বাসকেও অতিক্রম করে, প্রায় এক মিলিয়ন বছরের উপরে। আমরা নিয়ান্ডারথাল থেকে পৃথক হয়েছি আনুমানিক ৪০০, ০০০ বছর পূর্বে। আর বিবিসির তথ্য মতে এটি টিকে টিকে ছিলো প্রায় ৪৫ হাজার বছর পূর্বেও।

আমরা হোমো লঙ্গির জীবনের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে জানতে পারি, তারা ছিলো খুবই দৃঢ়, বলবান মানব, হোমো সেপিয়েন্সের সাথে তাদের সম্ভাব্য ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া( Potential Interaction) হয়তো ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণ করে। এছাড়াও হার্বিন ক্রেমিয়াম আমাদের নিকট আরো অধিক থেকে অধিকতর প্রমাণ উপস্থাপন করে হোমো ডাইভার্সিটি ও এ সকল বৈচিত্র‍্যময় প্রজাতিগুলোর সাথে আমাদের বিবর্তনীয় সম্পর্ক নিয়ে। আমরা আমাদের সুদীর্ঘকাল অতীতে হারিয়ে যাওয়া সিস্টার লিনিয়েজদের খুঁজে পেয়েছি! কিন্তু তারা কেনো বিলুপ্ত হয়েছিলো? মানব সভ্যতার সাথে দেখা হওয়ার পরই কী তারা নিখোঁজ হয়েছিলো। একটি গভীর ব্যাথাদায়ক প্রশ্ন তারপরও স্যাপি মনে থেকে যায়।

রেফারেন্স:-
1) Dragon Man’ discovered in China represents new type of human species: Scientists
https://www.sciencedaily.com/rel…/2021/06/210625120419.htm
2) “Geochemical provenancing and direct dating of the Harbin archaic human cranium” by Qingfeng Shao, Junyi Ge, Qiang Ji, Jinhua Li, Wensheng Wu, Yannan Ji, Tao Zhan, Chi Zhang, Qiang Li, Rainer Grün, Chris Stringer and Xijun Ni, 25 June 2021, The Innovation.
https://www.cell.com/…/pdfExtended/S2666-6758(21)00056-4
3) “Late Middle Pleistocene Harbin cranium represents a new Homo species” by Qiang Ji, Wensheng Wu, Yannan Ji, Qiang Li and Xijun Ni, 25 June 2021, The Innovation.
https://www.cell.com/the-innovation/S2666-6758(21)00057-6
4) “Massive cranium from Harbin in northeastern China establishes a new Middle Pleistocene human lineage” by Xijun Ni, Qiang Ji, Wensheng Wu, Qingfeng Shao, Yannan Ji, Chi Zhang, Lei Liang, Junyi Ge, Zhen Guo, Jinhua Li, Qiang Li, Rainer Grün and Chris Stringer, 25 June 2021, The Innovation.
https://www.cell.com/the-innovation/S2666-6758(21)00055-2

লেখক : অ্যান্ড্রোস লিহন লন্ডন থেকে পরিচালিত থিংক বাংলার ভলেন্টিয়ার।

বাংলাধারা/এআই

আরও পড়ুন