বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক সাংসদ বেগম রোজী কবির রাজধানীর এভারকেয়ার ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না-লিল্লাহি….. রাজিউন)। বুধবার (১৩ নভেম্বর) ভোর ৫টায় ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি দীর্ঘদিন যাবত লিভার জঠিলতায় ভুগছিলেন।
তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বনার্ঢ্য রাজনৈতিক জীবনে রোজী কবির তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে দলটির সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত এই সহযোদ্ধা।
তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী সহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব পালন করেন।
মুলত, তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় বড় ভাই সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও পরিকল্পনামন্ত্রী ব্যারিষ্টার সুলতান আহমেদের হাত ধরে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে তিনি থাইল্যান্ড, চীন, ইন্ডিয়া, চীন, শ্রীলঙ্কা, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরের পাশাপাশি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সভা বিমস্টেক, সার্কের মত গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
মহান জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ – সিডিএ’র বোর্ড মেম্বার ছিলেন।
সফল এই রাজনীতবীদ রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বেগম রোজী কবিরের বিচরণ ছিল উল্লেখ করার মতো।
তিনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, ডায়বেটিক এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ থ্যালেসামিয়া সমিতি, সাহিক, বিএনএসবি, শিশু একাডেমি, মহিলা ক্রীড়া সমিতি এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সাথে যুক্ত ছিলেন।
বেগম রোজী কবির চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর হালিশহরস্থ প্রখ্যাত জমিদার পরিবার আজগর আলী চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
দক্ষিণ হালিশহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল মাবুদ সওদাগরের পুত্র এবং বন্দর থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ হোটেল “হোটেল শাহজান এবং এশিয়াটিক কটনমিলের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
রত্নগর্ভা বেগম রোজী কবিরের দুই ছেলে দুই মেয়ে বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ বিদেশে অর্থনীতিবীদ, প্রকৌশলী, শিক্ষকতা এবং চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এদিকে বেগম রোজি কবিরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, ‘বেগম রোজি কবিবের মৃত্যুর সংবাদ ছিল আমার জন্য ভীষণ কষ্টের। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন সৎ, ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ নেতা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালিন সময় থেকে চট্টগ্রামে দলকে সুসংগঠিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নে তিনি কাজ করে গেছেন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার একদফার আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ছিলেন দল অন্তঃপ্রাণ নেতা। চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবার, আত্মীয়স্বজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।