ফেনী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন ও ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার মধ্যখানে অবস্থিত ফেনী নদীতে বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। অভিযোগ রয়েছে ইজারাকৃত অংশ থেকে বালু উত্তোলন না করে ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইজারাদারের লোকজন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত দেড়টায় উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জয়পুর পূর্ব জোয়ার এলাকায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারী নাজিম উদ্দিন এবং শাখাওয়াত, মাসুদ কালা, আলমগীরের গ্রæপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে প্রায় ৮-১০টি রকেট লঞ্চার ছোঁড়া হয়।
দুটি রকেট লঞ্চার ২’শ মিটার দূরে নদীর তীরে অবস্থিত মনোয়ারা বেগমের ঘরের টিনের উপর পড়ে। এসময় ঘরের চালে আগুন লেগে গেলে গ্রামবাসী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসী একতাবদ্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া করে এবং নদীর কিনারে থাকা বালু উত্তোলনের একটি বাল্কহেডে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সেটি ডুবিয়ে দেয়। আরো একটি বাল্কহেড ও দুইটি বোট আটকে রাখে।
করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার ও জয়পুর পূর্ব জোয়ার গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ফেনী নদী থেকে আগে আওয়ামী লীগের নেতারা অবৈধ ভাবে বালু তুলতো। এখন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বালু উত্তোলন করছে। ছোট্ট ফেনী দেখতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল মনে হতে পারে। প্রতিদিন শতাধিক বালু কাটার ড্রেজার কৃষকের তিন ফসলু জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে অবাধে।
সরেজমিনে মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফেনী নদীতে শতাধিক বালু কাটার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু কাটার মেশিনগুলো ইজারাকৃত অংশের বাইরে গিয়ে কৃষকের ফসলী জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে দিনে রাতে। নদীর পাড়ে ২৫-৩০ বছরের কয়েকজন যুবক নিয়মিত স্বশস্ত্র পাহারা দেয় কেউ যেন প্রতিবাদ করতে না পারে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। ফেনী নদীর তীরবর্তী পশ্চিম জোয়ার গ্রামে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, টমেটো, মরিচ, শিম, লাউ, মুলা সহ অন্যান্য সবজির আবাদ করেছে কৃষকরা। রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে গেছে তাদের কৃষি জমিও। ইতোমধ্যে ১০ থেকে ১২ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রাতে চর, দিনে নদীতে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা যেনো দেখার কেউ নেই। প্রতিবাদ করলে দিচ্ছে প্রাণ নাশের হুমকি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আশি বছরের বৃদ্ধ শুধাংশু রায় বলেন, আমার পৈতৃক জমি নদীতে চলে গেছে। আগেও কাটতো, এখনো কাটছে। আমার প্রায় ৩ একর জমি শেষ। দিনে রাতে কাটার দিয়ে কেটে বালি নিয়ে যাচ্ছে বালু খেকোরা। জয়পুর পূর্বজোয়ার গ্রামের মুসা হাজী মুন্সি বাড়ির ফাহিমা আক্তার জানান, বুধবার রাত প্রায় দেড়টার দিকে একটি রকেট লঞ্চার সদৃশ্য বিস্ফোরক তার বসত ঘরের উপর পড়ে আগুন ধরে যায়। পরে এলাকাবাসী এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। এছাড়া একই এলাকার তছি মিঝি বাড়ি, সাইফুলের বাড়ি, জামালা মাষ্টার বাড়ি ও মালি বাড়ির মানুষের বসতঘর ও উঠানে লঞ্চারগুলো পড়ে। এতে গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। নারী শিশুদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়।
দিদারুল আলম নামে আরেকজন জানান, বালু উত্তোলনকারীদের অত্যাচারে গ্রামের মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা নদীর বালু উত্তোলন নিয়ে মারামারি করবে আবার মানুষের বাড়িঘরেও আক্রমনের চেষ্টা করবে তা হতে পারে না। অবৈধ বালু উত্তোলনে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর বিভিন্ন হুমকি ধুমকি এমনকি মারধরও করা হয় বলে জানান তিনি।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমি থানায় নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা জানা নেই এবং কেউ অভিযোগও করেনি। এরপরও এলাকায় টিম পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।