ksrm-ads

১৯ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

মিরসরাইয়ে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ব্রিজ, রাস্তা-ঘাট

এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি ঢলে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে রয়েছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে কয়েকটি মৎস্য প্রকল্পে মাছ। বৃষ্টির কারণে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে শ্রমজীবি মানুষের। আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও সবজির ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন। এসময় উপজেলার সব দপ্তরের সব কর্মকর্তা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, মিরসরাই সদর, মিরসরাই পৌরসভা, বারইয়ারহাট পৌরসভা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে। জোরারগঞ্জ-টেকেরহাট সড়ক, বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে ফেনাপুনি, ওসমানপুরের মরগাং, ইছাখালীর চরশরৎ গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার। এছাড়া বড়তাকিয়া, মলিয়াইশ সহ বিভিন্ন জায়গায় গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা মো. জাকারিয়া জানান, পাহাড়ি ঢলের তীব্র ¯স্রোতে হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে গেছে। মসজিদের পূর্বপাশে রেললাইন ঘেষা এলাকায় ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে গেছে। প্রতি বছর এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের মেরামত করলেও বর্ষা মৌসুমে ভেঙ্গে যায়।

ফেনাপুনি এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, টানা বৃষ্টিতে তাদের গ্রামের প্রায় ১৫০ পরিবার পানিতে বন্দি হয়ে আছে। অনেকের রান্না ঘরের চুলায়ও পানি উঠেছে। এছাড়া কয়েকটি পুকরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

মিরসরাই সদরে কথা হয় দিন মজুর আশেকের সাথে। সে জানায়, শহর থেকে ট্রাক যোগে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য আসা মালামালগুলো বহন করে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা আয় হয়। গত কয়েদিনের বৃষ্টিতে কোন কাজ নেই। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছে তার।

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন এলাকার কিছু রাস্তা-ঘাট সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আমি ইউপি সদস্যদের নিয়ে মিটিংয়ে বসেছি। যারা যার ওয়ার্ডে লোক নিয়ে মেরামতের সীদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম (ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার) সাইফুল আহমেদ বলেন, উপজেলার কয়েকটি জায়গায় টানা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ায় সাময়িক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে আমাদের কর্মীরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এখনো সচল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় বিভিন্ন মৎস্য প্রকল্প থেকে মাছ কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এতে অনেক মৎস্য চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। ৫৫০ হেক্টর আমন ধানের মধ্যে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১০৬ হেক্টর জমি। ১২৫০ হেক্টর আমন বীজতলার মধ্যে ৪৫ হেক্টর বীজতলা পানিতে ডুবে রয়েছে। এছাড়া ৮৪ হেক্টর আমন ধান ও ৩৬ হেক্টর সবজি পানিতে ডুবে গেছে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, টানা বৃষ্টিতে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সব দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে জনপ্রতিধিরা। তিনি আরো বলেন, যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাদ্য সামগ্রী, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট রয়েছে। এছাড়া উপজেলার ৪৭টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ