ksrm-ads

১৩ জানুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

স্থানীয়দের প্রতিবাদ

মিরসরাইয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষক আটক

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়নের অভিযোগ উঠেছে এক মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে। রোববার (২৬ মে) দুপুরে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ওয়ার্লেসে অবস্থিত দারুল উলুম মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত হাফেজ মাওলানা জোবায়েকে থানা হেফাজতে নিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শনিবার রাতে ওয়ার্লেস দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক জোবায়ের হেফজ বিভাগের এক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়নের চেষ্টা করে। রবিবার সকালে ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠিরা বিষয়টি মাদরাসার ক্যান্টিনে জানায়। পরবর্তীতে যৌন নিপিড়নে আক্রান্ত ওই শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে এসে পরিবারকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। এরমধ্যে ঘটনাটি স্থানীয়রা জানার পর মাদরাসার শিক্ষকদের বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে যায়। এই নিয়ে স্থানীয় এবং মাদরাসার শিক্ষকদের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা ইব্রাহীম, স্থানীয় তরুণ তানভীর শাহরিয়ার রিয়াজ ও নুরনবী বশর আহত হয়। আহতরা উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরবর্তীতে খবর পেয়ে মিরসরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং অভিযুক্ত শিক্ষক জোবায়ের আটক করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসে।

আহত স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর শাহরিয়ার রিয়াজ জানান, মাদরাসার এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়নের বিষয়টি জানার পর আমি মাদরাসার ভিতরে গিয়ে হুজুরদের কাছে জানতে চাই। তখন মাদরাসার শিক্ষকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। আমার উপর হামলা করতে দেখে স্থানীয় অন্যান্যরা এগিয়ে আসলে মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের উপরও হামলা চালায়।

রিয়াজ আরও জানায়, ওয়ার্লেস দারুল উলুম মাদরাসায় যৌন নিপিড়নের ঘটনা আজ নতুন নয়। এরআগে বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। যতবারই ঘটে ততবারই মাদরাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব গোপনে বিষয়গুলো ধামাচাপা দিয়ে দেয় এবং অভিযুক্ত শিক্ষকদের কোন বিচার না করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

যৌন নিপিড়নের শিকার শিশু শিক্ষার্থীর কাছে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমি শনিবার দুপুর ৩টায় হুজুরের কাছে পড়তে গেলে দুই পৃষ্ঠা কোরআন পড়িয়ে বিকাল ৪ টার পরে আসার কথা বলে ছুটি দেয়। এরপর আমি যখন বিকাল ৪ টার পরে বাঁশখালী হুজুরের কাছে পড়তে গেলে তিনি আমার পরনে থাকা পায়জামার চেইন খুলতে বলেন, আমি অপরাগতা প্রকাশ করলে তিনি (হুজুর) আমার পায়জামার চেইন খুলে আমার এক নম্বর ধরে রাখে। পরবর্তীতে আমাকে পর্দার আড়ালে নিয়ে মুখে চুমু দেয়। বিষয়টি আমার সহপাঠিরাও দেখে।’

যৌন নিপিড়নের শিকার শিশু শিক্ষার্থীর বড় ভাই বলেন, ‘২০১৬ সালে আমার ছোট ভাইকে ওয়ার্লেস দারুল উলুম নূরানী বিভাগে ভর্তি করাই। নূরানী বিভাগ থেকে হিফজ বিভাগে যাওয়ার পর এখন নাজেরা বিভাগে পাঠদান চলছে। এতবছর কোন তার কোন সমস্যা শুনি নাই। হঠাৎ করে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমার ভাইয়ের সাথে ঘটবে কখনো চিন্তা করি নাই।’

এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে মাদরাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব বলেন, ‘দোষীতো প্রতিষ্ঠান না, দোষী একজন ব্যাক্তি। অভিযুক্ত বাঁশখালী হুজুরকে পুলিশ নিয়ে গেছে। সে যদি প্রকৃত অন্যায়কারী হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়রা এভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালানোর বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে।’

যোগাযোগ করা হলে মিরসরাই থানার অফিসার ইনর্চাজ মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এই ঘটনায় যৌন নিপিড়নের শিকার শিশু শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে থানায় কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হাতাহাতির ঘটনার বিষয়টি সর্ম্পকে আমি অবগত নই।’

আরও পড়ুন