চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে অধিকাংশ পুকুর ও জলাশয়ে মাছের খাদ্য হিসেবে পোলট্রি ফার্মের হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করায় দূষিত হচ্ছে পানি। ফলে নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, পুকুরে মাছ চাষে মুরগির বিষ্ঠা (লিটার ) ব্যবহার করায় পুকুরের পানি যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি প্রাকৃতিক পরিবেশ দুর্গন্ধ হওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পুকুরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরিবেশ দূষণ বেড়ে গেলেও প্রশাসনের কোন অভিযান নেই।
দুর্গন্ধযুক্ত মুরগির বিষ্ঠায় পানি দূষিত হওয়ার ফলে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এছাড়া বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে প্রায় দেড় হাজারের বেশি পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ করা হয়।
সোমবার (২৯ জুলাই) সকালে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় পুকুরে ভাসছে বস্তায় বস্তায় মুরগির বিষ্ঠা। এবিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা ও প্রশাসনের অবহেলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলার শাকপুরা, আমুচিয়া ও করলডেঙ্গা এলাকার স্কুল কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
নাজমা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এলাকার প্রায় পুকুরে দীর্ঘদিন ধরে মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করছেন মৎস্যচাষীরা। এছাড়া পুকুর পাড় ও চলাচলের রাস্তার পাশে স্তুপ করে ফেলে রেখেছেন এসব মুরাগির বিষ্ঠা। কোথাও-কোথাও মাসের পর মাস সড়কের পাশেই পড়ে থাকে। দুর্গন্ধে সড়ক দিয়ে চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। নাকে-মুখে কাপর চেপে যাতায়াত করতে হয়। মুরগির বিষ্ঠার কারণে পুকুরের পানি পঁচে দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন এলাকার মানুষ। আর এ থেকে ফায়দা লুটছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোন ধরনের কাজ করা যাবে না জানিয়ে এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিমাদ্রি খীসা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালখালী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ বলেন, পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য মুরগী বিক্রয় শেষে গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা জৈব সার তৈরি করে পরবর্তীতে জমিতে ব্যবহার করা যায়। তবে পোল্ট্রির বিষ্টা বা লিটার সরাসরি মাছের খাদ্য হিসেবে পুকুরে ব্যবহারের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বোয়ালখালী প্রাণিসম্পদ দপ্তর খামারিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, খামার পরিদর্শন ও খামার রেজিষ্ট্রেশন/নবায়নের সময় উত্তম চর্চার বিষয়গুলো নিশ্চিত করে। কোন খামারের বিরুদ্ধে আমার দপ্তরে এ সংক্রান্ত অভিযোগ আসলে আমি দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শিমুল বড়ুয়া বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন পদ্ধতিতে মাছ চাষে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের। তারপরও দিন দিন এভাবে মাছচাষে এর ব্যবহার বাড়ছে। এমন ক্ষতিকর পদ্ধতি বন্ধ করতে সকল মৎস্য চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।