ksrm-ads

১১ নভেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

মেয়াদোত্তীর্ণ তেল নিয়ে টি কে গ্রুপের ঔদ্ধত্য!

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ তেল নিয়ে পাইপ লাইনে দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে আবার বাজারে ছাড়ছে টি কে গ্রুপের ‘পুষ্টি সয়াবিন তেল’। এমনটাই প্রমাণ মিলেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে। মেয়াদোত্তীর্ণ তেল বাজারজাতকরণের দায়ে টি কে গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানকে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন র‌্যাব-১০ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত।

শুধু তাই নয়, পুষ্টির কারখানায় কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবের ৮০ ভাগ রাসায়নিক পদার্থের মেয়াদ দুই বছর আগে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে অভিযানে প্রমাণ পাওয়া যায়। এই অবস্থায় প্রতিদিন বাজারে লাখ লাখ কার্টন তেল সরবরাহ করছে টি কে গ্রুপ।

তবে র‌্যাবের এই অভিযানকে দুর্ভাগ্য বলছেন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরা। পাশাপাশি তারা দাবি করছেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ তেল বাজারজাতকরণের এই কাজ শুধু পুষ্টি নয়, সকল কোম্পানিই করে, সারা বিশ্বেই হয়। এতে স্বাস্থ্যহানীরও কিছু ঘটেনি।’

পুষ্টিকে জরিমানা করা অভিযানের পর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, পুষ্টির বিরুদ্ধে ‍দুটি বড় অভিযোগ ছিল যে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ তেল সংগ্রহ করে কারখানায় পাইপ লাইনের মধ্য দিয়ে প্রসেস করে বাজারজাত করা হচ্ছে। আরেকটা হচ্ছে তাদের ল্যাবে যেখানে তেলের গুণগত মান নির্ণয় করা হয় সেই পদার্থেরই মেয়াদোত্তীর্ণ দুই বছর। এত বড় প্রতিষ্ঠান এ ধরণের কাজ করতে পারে বিশ্বাস হচ্ছিল না।

কারখানায় মেয়াদোত্তীর্ণ তেল প্রক্রিয়াজাত করার প্রমাণ পেলেন, তাহলে বাজারে তাদের যে পরিমাণ তেল রয়েছে সেগুলো কি স্বাস্থ্যসম্মত- এমন প্রশ্নের জবাবে সারওয়ার আলম বলেন, ‘বাজারের তাদের যে তেল আছে সেটাতেও ঝামেলা থাকতে পারে, আমাদের আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। তবে যেহেতু রমজান মাস তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে র‌্যাবের অভিযোগের বিষয়ে টি কে গ্রুপের সেলস এন্ড মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক মোফাসেল হক বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরির বড় ধরণের সংস্কার কাজ চলছে। ল্যাব স্থানান্তরের কাজ চলছে। আমাদের দুর্ভাগ্য সেদিন মার্কেট থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ তেল সংগ্রহ করে ডাম্পিং বা অন্য কোথাও রাখার সুযোগ হয়নি।’

‘আর বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ তেল তুলে আনা এটা ধারাবাহিক কাজ। উনারা যদি মার্কেটে যেতেন বা আমাদের সরবরাহ দেখতেন তাহলে ঠিক ছিল। আর আমাদের তেলের তো এক বছর মেয়াদ থাকে, কিন্তু আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির (নাম উল্লেখ না করে) বোতলের গায়ে দেড় বছর মেয়াদ দিয়ে থাকেন।’

তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলটাই আসলে প্রিজারভেটিভ, এখানে আসলে কিছু করা যায় না। আমরা যেটা রিফাইন করে দেব সেটা ক্রুডের সঙ্গে যাবে। ক্রুড অনেক উচ্চ মানের একটা জিনিস। আমরা প্রসেস করে দিচ্ছি ক্রুডের সঙ্গে যাওয়ায় কোনোভাবেই স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর না বরং এটা স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ভালো। আসলে সেদিন যেটা ঘটেছে, সেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছুই না।’

টি কে গ্রুপের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘উনারা (ভ্রাম্যমাণ আদালত) যে কিউসি ল্যাবের কথা বলছেন কথাটা আসলে সঠিকভাবে আসেনি। ওখানে যে সিলিকা জেল ব্যবহার করা হয়, ওটার আসলে কোনো মেয়াদই থাকে না। যাই হোক আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সেদিনই সেটেল করে দিয়েছি।’

তাহলে বাজারে পুষ্টির যে তেল রয়েছে সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজারের তেল মেয়াদের মধ্যেই রয়েছে। সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ তেল থাকার সুযোগ নেই। আমরা ৪০-৪৫ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি, আমরা কি সুনাম নষ্ট করতে যাব? প্রতিদিন কয়েক লাখ কার্টন সরবরাহ করি, আর সেদিন ৭০-৭২ কার্টন মেয়াদোত্তীর্ণ পেয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ৫ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় পুষ্টি সয়াবিনের একটি কারখানায় র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর

আরও পড়ুন