খুলে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পৌঁছানোর প্রবেশদ্বার। খাগড়াছড়ির রামগড়ে ফেনী নদীর ওপরে দুই দেশের সীমান্তকে জুড়ে দেওয়া সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরই মধ্যে নতুন ‘বাণিজ্য করিডোর’ পরিচিতি পাওয়া সেতুটির নাম রাখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’।
বাংলাদেশের সাথে ভারতকে সরাসরি যুক্ত করবে- প্রথমবারের মতো এমন একটি সেতুর উদ্বোধন হলো মঙ্গলবার। রামগড়ের সঙ্গে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম শহরকে যুক্ত করা সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার। এর নির্মাণ ব্যয়ের (১৩৩ কোটি রুপি) পুরোটাই বহন করেছে ভারত।
সাড়ে ৫ বছর সময় নিয়ে দেশটির ‘ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ সেতুটি নির্মাণ করেছে। মূলত এই সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। যে কারণে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হয়ে আসবে। এর আগ পর্যন্ত ত্রিপুরার নিকটতম বন্দর কলকাতার দূরত্ব ছিল কমপক্ষে ১৬০০ কিলোমিটার। তাই এই সেতুর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের বিশাল এক সম্ভাবনা দেখছে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের চেহারাটাই আমূল বদলে দেবে এই ‘মৈত্রী সেতু’। আর সেই সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কণ্ঠেও। তিনি এই সেতুকে দুই দেশের বাণিজ্য এবং মানুষে মানুষে সংযোগের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এটা হবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পৌঁছানোর প্রবেশদ্বার।
নতুন এই সেতুকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অব্যাহত সহযোগিতার স্মারক বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সেতু আমাদের দুই দেশের মাঝে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না বরং ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখবে।
সব দিক বিবেচনা করে আমরা বলতে পারি, এই সেতু দুই দেশের সুদীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্বের আরেকটি স্মারক। যা একটি সেতুর চেয়েও অনেক অনেক বেশি। কেননা এই সেতু দিয়েই এখন দুই দেশের পর্যটন থেকে শুরু করে ব্যক্তি যোগাযোগাও বাড়বে।
বিশেষ করে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের জন্য সুবিধা হবে। আমরা জানি, এরই মধ্যে ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে কম খরচে ও কম সময়ে সেদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পণ্য আনা-নেওয়া খুবই সহজ হয়ে গেছে। যতটুকু বাধা ছিল, তাও সমাধান হয়ে গেছে এই সেতুটির কল্যাণে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মাসে এ এক বিশাল অর্জন। কেননা দু’দেশের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক যতটা গভীর হবে- ততই এগিয়ে যাবে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ। আর তাতে দিন শেষে লাভবান হবে উভয় দেশের জনগণই।
বাংলাধারা/এফএস/এআই