বাংলাধারা প্রতিবেদন »
চট্টগ্রামের দক্ষিন পতেঙ্গা এলাকার বিজয় নগরে বিকিরন বড়ুয়া নামে এক ভুয়া ডাক্তারকে ছয় মাসের কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। এ সময় আয়েশা মেডিকেল নামে এক ফার্মেসিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ঔষধ বিক্রির দায়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা ও এর মালিক ফরিদুল আলমকে তিন মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
সোমবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় পতেঙ্গা সার্কেল এর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডাঃ মোহাঃ ওয়েজেদ চৌধুরী অভি এবং র্যাব-৭ এর সিনিয়র পুলিশ সুপার জনাব মিমতানূর সহ অন্যান্য র্যাব সদস্যবৃন্দ।
মঙ্গলবার (১৮জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিযানের বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার বিকালে কথিত ডাক্তার বিকিরন বড়ুয়াকে ধরার জন্য তার কাছে রোগী সেজে এক র্যাব সদস্যের মাধ্যমে সিরিয়াল নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬ টায় চেম্বারে আসতে বলা হয় তাকে। দক্ষিন পতেঙ্গার বিজয়নগরের আয়েশা মেডিকেলে তার চেম্বারে গিয়ে দেখা যায় বাইরে অসংখ্যা রোগীর ভীড়।
এসময় নিজেকে ডায়েবেটিস, মেডিসিন ও শিশু রোগের চিকিৎসক দাবি করা বিকিরনের চেম্বারের বাইরে বেশ কয়েকজন অন্তঃস্বত্তা মহিলা ও কয়েকটি শিশুকে দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমে র্যাবের সিনিয়র এএসপি মিমতানূর রোগী সেজে তার সাথে কথা বলেন এবং এক পর্যায়ে তার ডিগ্রী সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় বিকিরন তার কাছে সার্টিফিকেট ঢাকায় রয়েছে বলে উল্লেখ করে তা আনার জন্য দুই দিন সময় চান।
পরে বাইরে অপেক্ষা থাকা পতেঙ্গা সার্কেল এর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব তাহমিলুর রহমান এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডাঃ মোহাঃ ওয়েজেদ চৌধুরী অভি তার চেম্বারে প্রবেশ করেন এবং তার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার জানতে চান। তিনি তার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৯১১১৩ বলে উল্লেখ করেন। এ নাম্বার দিয়ে www.bmdc.org.bd ওয়েব সাইটে সার্চ করে এ নাম্বারের বিপরীতে কোন ব্যাক্তির অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায়নি এমনকি ওয়েব সাইট থেকে জানা যায় এখন পর্যন্ত এমবিবিএস ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৯০০০০ পর্যন্ত তালিকাবদ্ধ।
বিকিরনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গত মাসে তার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এবং এ জন্যই তা ওয়েব সাইটে নেই বলে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। কোথা থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জণ করেছেন জানতে চাইলে তিনি ভারতের একটি মেডিকেল কলেজের নাম বলেন। এবং সে মেডিকেল কলেজের বেশ কিছু ভুয়া প্রিন্ট করা সার্টিফিকেট প্রদর্শন করেন। বিকিরন বড়ুয়ার প্রেসক্রিপসন প্যাডে তিনি কাস্টমস হাউজের মেডিকেল অফিসার বলে উল্লেখ করেছেন। কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ নামে কোন সেখানে ডাক্তার কাজ করেন না বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি ঢাকায় মন্ত্রনালয়ে যোগদান করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
অপর দিকে, যে আয়েশা মেডিকেল ফার্মেসিতে তিনি চেম্বার করতেন সে ফার্মেসিকে লাইসেন্স দেখাতে বললে তার কোন লাইসেন্স নেই বলে জানান। তার আচরনে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদে সে এবং বিকিরন বড়ুয়া যৌথভাবে ভুয়া চিকিৎসা ব্যবসা করার কাহিনী বেরিয়ে আসে। ফার্মেসিতে তল্লাসি চালিয়ে চার বস্তা অননুমোদিত ও অবৈধ, ব্যবহার নিষিদ্ধ ঔষধ পাওয়া যায়। ২০১৩ সালের মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়া যায়, পাওয়া যায় জমে যাওয়া আইভি সেলাইন সহ নষ্ট ও গলে যাওয়া ঔষধ। এ সময় ফার্মেসির মালিক ফরিদুল আলমকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমান ও তিন মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/বি