বাংলাধারা ডেস্ক »
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে রপ্তানিমুখী সেক্টরগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৯ মে) টোকিওতে জাপান-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈচিত্র দেখতে চাই। এক্ষেত্রে জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে রপ্তানিকেন্দ্রীক সেক্টরগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যকার চমৎকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে সকল সম্ভবনা কাজে লাগানোর আমন্ত্রণ জানাই।
বিদেশি বিনিয়োগে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম উদার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আইনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, উদার ট্যাক্স পলিসি, মেশিনারি আমদানিতে কর রেয়াত সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। শতভাগ বিদেশি মালিকানা, লভ্যাংশ এবং মূলধনের পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সুবিধা দিচ্ছি। এ ছাড়া ইইউ, কানাডা এবং জাপানসহ বিশ্বের বেশিরভাগ শীর্ষ বাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রবেশাধিকারের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যয়, মানব সম্পদ, বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সুবিধা, বাণিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা ইত্যাদির বিচারে বাংলাদেশ দ্রুত উদীয়মান আকর্ষণীয় বিনিয়োগ স্থল।
গেল বছর জাপান টোবাকোর বাংলাদেশ ১.৪ বিলিয়ন বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এ রকম আরও বিনিয়োগ দেখতে চাই। এশিয়ায় জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাপান-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বহু জাপানি কোম্পানি এ সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যবসা করছে। জিডিপি ৮ দশমিক ১৩ অর্জনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চলমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ডাবল ডিজিট জিডিপি অর্জন করবে। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে শীর্ষ ৩২টি দেশের মধ্য রয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দেশের মধ্যে একটি হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি বেসরকারি সেক্টর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি উদ্যোক্তা তৈরিতে এবং বেসরকারি বিনিয়োগে, এটা দেশি বা বিদেশি হতে পারে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আড়াই হাজারে জাপানের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করা আছে। সরকার টু সরকার এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে প্রচুর জায়গা নেয়া হয়েছে।
আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কের কাজ চলছে এবং আরো ২৬টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণাধীন রয়েছে। বাংলাদেশের ৮০০ আইটি কোম্পানির মধ্যে দেড় শ কোম্পানি বিদেশি গ্রাহকদের বিশেষ আইটি সেবা দিচ্ছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএম, ওরাকল, সিকসোসহ স্বনামধন্য কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশের ২০ হাজার আইটি বিশেষজ্ঞ কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক সুনামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ তৈরি-পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ওষুধ শিল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বড় একটা প্রাণকেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ ১০০টির বেশি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব মানের সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিশ্বের নজর কেড়েছে। ইউরোপসহ ১৪টি দেশে বাংলাদেশ যাত্রী ও কার্গো জাহাজ সরবরাহ করছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে জাপানি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান।
জাপানের ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের নীতির প্রশংসা করেন জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর