চট্টগ্রামের রাউজানে প্রকাশ্যে এক যুবদল নেতাকে এলোপাথাড়ি গুলি করে পালিয়েছে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এতে ওয়ি নেতার দুই ঊরুতে এবং মাথায় গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সোমবাইজ্জে হাটের একটি সেতুর ওপর এ ঘটনা ঘটে।
আহত আনোয়ার হোসেন (৩৮) যুবদলের সদস্য বলে দাবি করেছে দলীয় সূত্র। তিনি ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমিরপাড়ার আবদুস সালামের ছেলে। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস কাদের চৌধুরীর অনুসারী।
এ ঘটনায় আজ রোববার সকালে থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। থানা সূত্র জানিয়েছে, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাতে মাটি কাটাসংক্রান্ত বিষয়ে একটি সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন আনোয়ারসহ কয়েকজন। এ সময় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এসে আনোয়ারকে গালাগাল করে তাঁর পায়ে দুটি ও মাথায় একটি গুলি করে পালিয়ে যায়। আনোয়ারের সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তবে মারধরের শিকারদের নাম জানা যায়নি।
গুলিবিদ্ধ যুবদল নেতার ভাই মুহাম্মদ দিদার হোসেনও ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সেতুর ওপর দাঁড়িয়েছিলাম তখন। হঠাৎ সেখানে অস্ত্রধারীরা হামলা চালায়। তাঁরা আনোয়ারের শরীরে তিনটি গুলি চালিয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরান জানান, যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন বাজারের আবু তালেব মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ উত্তর দিক থেকে সিএনজিচালিত চারটি অটোরিকশায় করে ১৫/২০ জন অস্ত্রধারী এসে তাকে গুলি করে মাথায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় তারা সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে ফাঁকা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়।
পরে আশপাশের লোকজন আনোয়ারকে উদ্ধার করে প্রথমে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বালু ও মাটির ব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। ওই এলাকার অনেক পাহাড়, টিলা এবং কৃষিজমি কেটে বিক্রি করছে ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট। আগে সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁদের অনেকে এখন বিএনপিতে যোগ দিয়ে মিলেমিশে বালু, পাহাড়, টিলা ও কৃষিজমি কেটে বিক্রি করছেন। ব্যবসার আধিপত্য ধরে রাখতেই এমন দ্বন্দ্বের শুরু। ১৫ দিন আগেও একই ইউনিয়নের ভোমরপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল। গত ৩০ নভেম্বর রাতে একই ইউনিয়নের শমসেরপাড়া গ্রামে নাসির উদ্দিন (৪৫) নামের একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছিল। তিনিও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। এ ঘটনায় আজ সকালে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ছয়জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি শফিকুল আলম বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই।