১৫ জুলাই ২০২৫

রাঙ্গুনিয়ার ‘সোনালী প্রজন্ম’— অসহায়দের মুখে হাসি ফোটায় যারা

আশিক এলাহী, রাঙ্গুনিয়া »

ক্যান্সার রোগে ভুগছেন হাছান মাহমুদ মাহি (২০) মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। দরিদ্র পরিবারের সদস্য। রোগ নির্ণয়ের আগে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচে টাকা-পয়সা খরচ করে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। ক্যান্সার নির্ণয়ের পর কপালে ভাজ পড়ে মাহির বাবা ফজলুল করিমের। উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যেতে হবে মাহিকে। কিন্তু এত টাকা পাবেন কোথায়— এই চিন্তা এসেও ভর করেছে তার ওপর। টাকার অভাবে সঠিক সময়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে না পারার দুঃখ যেন তাঁকে পুড়িয়ে মারছে। এমন দুঃসময়ে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে প্রবাসীদের মানবিক সংগঠন ‘সোনালী প্রজন্ম প্রবাসে হাজীপাড়া’। মাহির চিকিৎসার জন্য ৭২ হাজার ৫শ টাকা অনুদান প্রদান করে এই সোনালী প্রজন্ম।

মাহির বাবা মো. ফজলুল করিম জানান, ‘আমি সোনালী প্রজন্ম প্রবাসে হাজীপাড়া সংগঠনটির কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সংগঠনটি যেন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারে, এটিই আমার চাওয়া। সংগঠনের সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া করি।’

এসময় সংগঠনের সভাপতি জিল্লুর রহমান চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টা মোজাম্মেল হক ফরিদ, সদস্য মোজাহেদুল ইসলাম, জাহেদুল ইসলাম, খাইরুদ্দিন বাদশা, রবিউল হোসেন, নুরুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিন, শাহেদ, আবু জাফর, সাইফুল ইসলাম, আমিন বাদশা উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠনের সভাপতি জিল্লুল রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মাহি অসুস্থ শুনে, দুই-একদিনের মধ্যে আমরা ১ম ধাপে অনুদান প্রদান করেছি। আমরা চাই মাহি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক। মাহির পাশে আমরা আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক ভাই-বন্ধু দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর দেশে এসে খুবই কষ্টে পড়ে যায়। আবার অনেকে বিদেশে মৃত্যুবরণ করেন— এসব চিন্তা করে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করি।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের হাজীপাড়া প্রবাসীদের সামাজিক সংগঠন ‘সোনালী প্রজন্ম প্রবাসে হাজীপাড়া’ শুধু মাহির পাশে নয়, এলাকায় আরও অনেকের পাশে এভাবে ছুটে এসেছে সংগঠনটি। যে কোন সমস্যা, দুর্যোগে এসেছে ছুটে যায় সংগঠনের কর্মীরা। এখনো সেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে চলেছে স্বগৌরবে।

সংগঠনটি এলাকার অসহায় ও অসচ্ছল পরিবারের মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গরিব-দুস্থদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় যেকোন সময়। বেশ কিছুদিন আগে টাকার অভাবে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন হাজীপাড়ার মো. নুরুল হুদা। খবর পেয়ে ‘সোনালী প্রজন্ম’র কর্মীরা ছুটে যান এবং ৩১ হাজার ৫শ টাকা অনুদানের মধ্য দিয়ে বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা হাজীপাড়া এলাকার স্বপ্নবাজ রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ‘সোনালী প্রজন্ম প্রবাসে হাজীপাড়া’ সামাজিক ও ব্যবসায়িক নামে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। দেশ থেকে এ সংগঠনের দেখবাল করেন মাস্টার মো. মোজাহেদুল ইসলাম।

২০১৮ সালে ১৩২ জন রেমিট্যান্স যোদ্ধা নিয়ে এই সংগঠনের পথচলা শুরু হয়। প্রত্যেকে মাসিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করেন ফান্ডে। ভবিষ্যৎ জীবনের সঞ্চয় হিসেবে এই ফান্ড করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

দেখা গেছে, করোনার সময় বিভিন্ন অসহায় ও অসচ্ছল পরিবারকে সহযোগিতা করে গেছে সংগঠনটি। করোনাকালীন সময়ে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সামাজিক সংগঠন আনজুমান এ ছওয়াদে আযমের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিল। ২০২০ সালে একই এলাকার শাহেদ এলাহী নামে একজনের চিকিৎসার জন্য দশ হাজার টাকা, এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যান্সার আক্রান্ত একজনকে ১৩ হাজার টাকা অনুদান দেয় সংগঠনটি।

সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মো. মোজাম্মেল হক ফরিদ বলেন, ‘আমাদের এলাকার প্রবাসীদের নিয়ে এবং প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এই সংগঠন করেছি। এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের দুংখ দুর্দশা লাঘব করতে কাজ করে যাচ্ছে সোনালী প্রজন্ম প্রবাসে হাজীপাড়া।’

করোনায় কাতার প্রবাসী মো. ফারুক উল্লাহ নঈমী ও সৌদি আরব প্রবাসী মো. নেজামুল হক মৃত্যুবরণ করেন। সংগঠনের মাধ্যমে তাদের পরিবারকে ১৩ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছিল। শহীদ উদ্দিন নামে একজনকেও ১৩ হাজার টাকা দেয়া হয়। সংগঠনটি ইতোমধ্যে এলাকায় তাদের কাজে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এলাকার মানুষের মুখে মুখে ‘সোনালী প্রজন্ম প্রবাসে হাজীপাড়া’ নাম শুনে উৎসাহিত ও সহযোগিতার গতি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সরেজমিনে সংগঠনের সদস্য মো. মোজাহেদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখি, সংগঠন সদস্যদের অর্থ ও এলাকায় বিভিন্ন মানুষদেরকে দেওয়া অনুদানের সব হিসাব-নিকাশ করছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা চায় সমাজ আলোকিত হোক। আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যাপারে কাজ করবে এ সংগঠন। প্রবাসীরা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে এই কাজটুকু করে যাচ্ছে। তাই দেশের উন্নয়ন ও অসহায়দের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা করে যাবে সংগঠনটি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. এমরান হোসেন জাকারিয়া বলেন, ‘মানুষের দুঃসময়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে আসছে সংগঠনটি। এদিকে মাস্টার মো. মোজাহেদুল ইসলাম এসব কিছুর দেখাশোনা করেন এবং এলাকার যে কারো সমস্যায় তিনি এগিয়ে আসেন। তিনি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আইডির মাধ্যমে সবার কাছে সমস্যা তুলে ধরেন। এভাবে ব্যক্তি ও সংগঠন এগিয়ে আসে সহযোগিতা নিয়ে। প্রবাসীদের সহযোগিতায় সুন্দর সমাজ গড়ে উঠুক, আমি এ প্রত্যাশা করি।’

আরও পড়ুন