ksrm-ads

১৫ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

রেকর্ড পরিমান খেজুর আমদানিতে বাংলাদেশ!

ইফতারের জন্য একটি বিশেষ খাদ্য হলো খেজুর। বিগত বছরগুলোতে শুধু ইফতারের আইটেম হিসেবে থাকলেও এটি সাম্প্রতিকালে জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত পাচ্ছে। গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও ভোক্তাদের পছন্দে দেশের খেজুর আমদানি বেড়েছে, যা প্রমাণ করে খেজুর এখন সারা বছর ধরে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের একটি অংশ হয়ে উঠেছে।

খেজুর এখন একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ এটি বছরের সব সময়ই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন কর্মকর্তার তথ্য অনুসারে, গত কয়েক বছরে খেজুরের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৬,৩০১ টন খেজুর আমদানি করেছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে খেজুরের আমদানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯,০৪৬ টনে পৌঁছেছিল, যদিও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এটি সামান্য কমে ৩৭,৮৫১ টনে দাঁড়ায়।পরবর্তীতে দশ বছরে এই আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৫,৩৪৫ টনে পৌঁছেছে।যদিও সরকার খেজুরকে এখনো বিলাসী পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত রেখেছে, বাস্তবে এটি আর বিলাসী পণ্য নয় বরং একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য হয়ে উঠেছে।

কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়ে ৬৩,৭০৩ টনে পৌঁছায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খেজুর আমদানি হয় ৫৭,২০৯ টন, কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমদানি কমে ৩৯,৭৯০ টনে নেমে আসে।

এরপর থেকে আবারও আমদানির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে—২০২০-২১ অর্থবছরে ৬২,২০০ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৮,৯৬১ টন, এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৪,১৫১ টন আমদানি করা হয়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে (১ জুলাই ২০২৪ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত) বাংলাদেশ ৬৪,৪৯০ টন খেজুর আমদানি করেছে বলে এনবিআর-এর তথ্যসূত্রে জানা যায়।

এই কারণে খুচরা বাজারে খেজুরের দাম কমেছে। উক্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারেটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ কাওসার আলম পাটোয়ারি বলেন, গ্রামীণ বাজারে কম দামে খেজুর পাওয়া যাবে এবং খুচরা পর্যায়ে দাম ২০০ টাকা প্রতি কেজি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তবে,বাংলাদেশে আমদানিকৃত সর্বোচ্চ দামের খেজুরের মূল্য ১,২০০-১,৩০০ টাকা কেজির মধ্যে থাকবে।

বাংলাদেশে টাটকা ফল আমদানিকারক সমিতির (বিএফএফআইএ) মতানুযায়ি, দেশে প্রতি বছর ৯০,০০০-৯৫,০০০ টন খেজুরের চাহিদা থাকে, যার মধ্যে রমজান মাসে চাহিদা থাকে প্রায় ৬০,০০০-৭০,০০০ টন।

বিএফএফআইএ-এর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রমজান ব্যতীত সময়েও খেজুরের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ এটি অনেকেই এখন সারা বছর জুড়ে খাদ্য সম্পূরক হিসেবে গ্রহণ করছেন।

বর্তমান বাজারে সবোর্চ্চ বেশি বিক্রি হওয়া খেজুরের জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে—দাবাস, জাহেদি, মাবরুম, মারিয়ম, আজওয়া, মেদজুল, শুক্কারি এবং সালাবি।

বাংলাদেশে মূলত ইরাক, ইরান, আলজেরিয়া, মিসর, সৌদি আরব, তিউনিসিয়া, কুয়েত, জর্ডানসহ অন্যান্য দেশ থেকে খেজুর আমদানি করে থাকে।

সরকার সম্প্রতি খেজুর আমদানির উপর শুল্ক হ্রাস করেছে। ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সরকার শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করেছে। পাশাপাশি, অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে।

বিএফএফআইএ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেজুরের দাম খুচরা বাজারে প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে এবং নভেম্বর থেকে যে পরিমাণ খেজুর আমদানি হয়েছে, তা রমজানের পরেও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে।

তবে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে বাজার পর্যবেক্ষণ কঠোর করার অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে বাজারে অযথা মূল্য বৃদ্ধি করা না হয় এবং ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে খেজুর কিনতে পারেন

আরও পড়ুন