হাসান সৈকত » পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত স্টাফ কোয়ার্টার নিয়ে চলছে রমরমা ভাড়াবাণিজ্য। এক শ্রেণির কর্মচারীরা কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে নিজেরা না থেকে ভাড়া দিয়ে আয় করছেন বাড়তি টাকা। অনেকেই আবার অবৈধভাবে অতিরিক্ত ঘর তুলে সেসব ভাড়া দিচ্ছেন বাহিরাগতদের কাছে। প্রভাবশালীরা কোয়ার্টারের জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত আঙিনা দখল করে গড়ে তুলছেন বিভিন্ন স্থাপনা। স্টাফ কোয়ার্টার ঘিরে রমরমা এ ব্যবসা চললেও তদারকি নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পাশে রেলওয়ের কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত রেলওয়ে স্টেশন কলোনিতে চোখে পড়ে এমনই অনিয়মের চিত্র। দেখে বোঝা উপায় নেই এটি কোনো সরকারি কলোনি। বরং মনে হবে এটি যেন এক বাস্তুহারাদের বস্তি। চট্টগ্রামে রেলওয়ের অন্যান্য কলোনীগুলোর চিত্রও ভিন্ন নয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব কোয়ার্টারের আশেপাশে অতিরিক্ত ঘর তুলে অবাধে চলছে ভাড়া বাণিজ্য।
বাড়তি আয়ের আশায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব অতিরিক্ত ঘরগুলোতে ভাড়া থাকেন রিকশা চালক, দিন মজুর, সিএনজি চালক, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নানা নিম্ন আয়ের পেশাজীবী মানুষ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তদারকিহীন এ স্টাফ কোয়ার্টার মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যের পাশাপাশি পরিণত হচ্ছে মাদকের স্বর্গরাজ্যে। এসব কলোনিগুলোতে অবাধে চলে মাদকের ব্যবসাসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড।
নিজের নামে স্টাফ কোয়ার্টার বরাদ্ধ নিয়ে বাড়তি আয়ের আশায় আশে পাশের খালি জায়গায় অতিরিক্ত ঘর তুলে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ের টি/এ ব্রাঞ্চ আফিসে কর্মরত কেরানি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে। নিজের বরাদ্ধকৃত স্টাফ কোয়ার্টারের ছাদেও অতিরিক্ত ঘর তুলে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ আছে এ কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
রেলওয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার কোয়ার্টার টি-৩৯ এর ছাড়ে বাড়তি ঘর তৈরী ও সরকারী জায়গা দখল করে অবৈধ ঘর তুলে ভাড়া দেওয়ার প্রমাণ মিলে সরেজমিন পরিদর্শনে।
অতিরিক্ত ঘর তুলে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে মুঠোফোনে কেরানি নাজমুল হুদার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়ে কোয়ার্টারের ছাদে অতিরিক্ত ঘর তুলেছি।
অতিরিক্ত ঘর তোলার অনুমতি দেওয়ার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কাউকে অতিরিক্ত ঘর তোলার অনুমতি দিইনি। আমি চাইলেও কাউকে অনুমতি দিতে পারবো না। সেই ক্ষমতা আমার নেই। অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের বাসা-বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব বিভাগীয় প্রকৌশলীর। এই বিষয়টি নিয়ে আমি বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে আলোচনা করবো। কে বা কারা আমার নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারে অতিরিক্ত ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এমন অসঙ্গতি দেখা যায় চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রায় সব রেলওয়ে কলোনিতে। রেলওয়ের নিম্ন স্তরের কর্মচারীরা বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের বেসিক বেতন থেকে বাসা ভাড়া বাবদ ৫৫ শতাংশ টাকা কেটে রাখে। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে নিজেদের সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ্য ঘর তৈরী ও স্টাফ কোয়ার্টার বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রামের জিএম জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া সম্পূর্ণভাবে রেলওয়ের নীতি বহির্ভূত কাজ। যারা অন্যায়ভাবে এসব কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে তদন্ত করা হবে। ভাড়া বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
রেলওয়ের খালাসি পদে চাকরি করা এক কর্মচারী বলেন, আমার বেসিক বেতন ৮০০০ টাকা এবং অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে প্রায় ১৩০০ টাকার মতো পাই। মূল বেতন থেকে বাসা ভাড়া বাবদ ৫৫ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়। বাকি টাকা দিয়ে কোনোভাবেই সংসার চালানো সম্ভব হয়না। আর তাই সংসার চলাতে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে বাড়তি ঘর তৈরী করে ভাড়া দিতে আমরা বাধ্য হই।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এইটা যার যার ডিপার্টমেন্টের সমস্যা। কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তবে তা দেখার দায়িত্ব সম্পূর্ণ ওই বিভাগে কর্মরত অফিসারের। এই নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারবো না।