লন্ডনে বিয়ের অনুষ্ঠান ও নানা দাওয়াত নিয়ে ব্যস্ত আছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে সমালোচিত নেতাদের অন্যতম হাছান মাহমুদ এড়াতে পারেননি ক্যামেরার নজর। ক্যামেরায় ধরা পড়লেন একাধিক ছবিতে। তবে চেহারায় চিন্তার ছাঁপ।
স্থানীয় সময় রোববার (২০ এপ্রিল) যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ওটু এলাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের ছেলে ডা. সৈয়দ ফাইয়াজ রহমানের বিয়ের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাবেক আরও অন্তত তিনজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দেখা মিলেছে।
সেই বিয়েতে অংশ নেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। সিলেটের সাবেক সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবকেও বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসকল ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর সৃষ্টি হয় নানান আলোচনা সমালোচনার। জুলাই হত্যা মামলায় ও সাধারণ মামলায় একের পর এক আটক হচ্ছে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলে কটাক্ষ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর পর স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটে। তিনি ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। তারপর থেকে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাকর্মীরা অনেকেই পালিয়ে যান। আবার অনেকেই গ্রেপ্তার হন। সরকার পতনের পর এ পর্যন্ত ২৭ মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের পাঁচ প্রতিমন্ত্রী ও তিন উপমন্ত্রী। গ্রেপ্তার হয়েছেন তিন উপদেষ্টাও। এর বাইরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন হাসিনা সরকারের সাবেক ৪৩ সংসদ সদস্য ও ১১ আমলা।
এ ছাড়া পুলিশের সাবেক দুজন মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। পাশাপাশি আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি ও পাঁচজন সাংবাদিকও গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরও গ্রেপ্তার হয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
লন্ডনে গিয়ে বাঁচলেন হাসান মাহমুদ
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পরদিন ৬ আগস্ট বিকেলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদকে ঢাকা বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে বলে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করে। এরপর থেকে তিনি সেনা হেফাজতে আছেন— এমন খবর বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া গেলেও পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, গত বছরের ২৬ আগস্ট সন্ধ্যায় (বেলজিয়াম সময়) হাছান মাহমুদ নিরাপদে বেলজিয়ামে পৌঁছান। সেই থেকে বেলজিয়ামে তিনি লিমবুর্গ প্রদেশের হ্যাসেল্ট সিটিতে তার নিজের বাড়িতেই আছেন।
এর আগে ৪ আগস্ট রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের পরিবারের সদস্যরা (EK 586) নম্বর ফ্লাইটযোগে দেশ থেকে পালিয়ে যান। তাদের গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। তবে তার পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নেই থাকেন।
হাছান মাহমুদ দীর্ঘদিন বেলজিয়ামে বসবাস করেছেন। দুবাই, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য ছাড়াও বেলজিয়ামে তিনি বিপুল অংকের টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে ভাগ্য খুলে যায় হাছান মাহমুদের। পরবর্তীতে তিনি ২০০৯ সালের মহাজোট সরকারের প্রথম ছয় মাস পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং পরে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে জলবায়ু তহবিলের বিপুল অংকের টাকা লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সর্বশেষ তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এএস/বাংলাধারা