৮ জুলাই ২০২৫

শরণংকর ভিক্ষুর অবৈধ বন দখল; বৌদ্ধ সম্প্রদায় নেতাদের বিবৃতি

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বৌদ্ধ বিহার স্থাপনের নামে ভিক্ষু শরণংকর কর্তৃক অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনভূমি দখল, পাহাড় ও গাছপালা কাটার সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। শনিবার (১৭ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এই সমালোচনা করেন নেতৃবৃন্দ।

বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়ার স্বাক্ষরে প্রেরিত ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি ও ঢাকাস্থ কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি দিব্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় এবং বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব সাবেক ডিআইজি অমর বড়ুয়া স্বাক্ষরিত তিন পৃষ্ঠার এ বিবৃতিতে শরণাংকর ভিক্ষুর এ কর্মকাণ্ডকে তারা বৌদ্ধ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থনযোগ্য নয় বলে বর্ণনা করেছেন।

এই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, ‘মহামতি গৌতম বুদ্ধের আদর্শ ও বৌদ্ধ ধর্মের মর্মবাণী ‘অহিংসা পরম ধর্ম’। এ কারণে অবৈধভাবে বন ও অন্য ধর্মের উপাসনালয়, শ্মশান দখল ও কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা বৃহত্তর বৌদ্ধ সমাজ কখোনই সমর্থন করে না বরং এহেন কাজ মহামতি বুদ্ধের অহিংসা, করুণা ও মৈত্রীর বাণীকে খর্বকারী।’

বিবৃতিতে বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারা উল্লেখ করেন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ফলহারিয়া গ্রামের অনতিদূরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বনবিভাগের অনুমতি ছাড়া ২০১২ সালে জ্ঞানশরণ মহারণ্য বৌদ্ধ বিহার স্থাপন করেন ভিক্ষু শরণংকর থেরো। বনবিভাগের বাধা-নিষেধ সত্ত্বেও ক্রমে ক্রমে বনের আরো জায়গা বিহারের সাথে যুক্ত করা, পাহাড় ও গাছপালা কাটা হলে বনবিভাগ ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

‘মামলায় ‘ভিন্ন ধর্মের প্রতি বিষোদগারের’ও উল্লেখ ছিল। সুরাহা না হওয়ায় ২০২০ সালের ৯ জুলাই বনবিভাগ ও পুলিশের যৌথ অভিযানে সেখানে সকল অবৈধ স্থাপনার কাজ বন্ধ করা হয় এবং অবৈধ দখলদারিত্ব ও আল্লাহ এবং রাসুলকে অবমাননা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি থেকে উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়ার দায়ে আরো ডজন খানেক মামলা হয়।’ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এর পরপরই কেউ কেউ বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একে রাজনৈতিক রূপদানের অপচেষ্টা করে। এমতাবস্থায় দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতারা এলাকা পরিদর্শন করেন ও মৈত্রীপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার আহবান জানান। কিন্তু এর অবব্যহিত পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিদেশে অবস্থানকারী বৌদ্ধদের কাছে সরকার, সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তি, তাদের পরিবার এবং কয়েকজন শীর্ষ বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিরুদ্ধে বিষোদগার ছড়ানো হয়।

এ প্রেক্ষিতে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের বিবৃতিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমেই সমাধানের পক্ষে মতপ্রকাশ করেন।

এর আগে ১১ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অত্যাসন্ন দুর্গাপূজার আগেই বৌদ্ধ ধর্মীয় ভিক্ষু শরণংকর থেরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী ঐক্য পরিষদের নেতারা।

সেদিন মানববন্ধনের সনাতন ধর্মাবলম্বী ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, ‘ভণ্ড, প্রতারক, মিথ্যাবাদী, ভূমিদস্যু শরণংকর থের রাঙ্গুনিয়ার ফলাহারিয়া গ্রামে সনাতন সম্প্রদায়ের প্রাচীন শশ্মান দখল করে সেখানে কাউকে সৎকার করতে দিচ্ছে না। বৌদ্ধ ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বনবিভাগের একশ’ একর জায়গা দখল করে নিয়েছে। স্থাপনা নির্মাণের নামে হাজার হাজার গাছ উপড়ে ফেলে বনবিভাগ ধ্বংস করেছে। এসব অপকর্ম প্রকাশের পর এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে এখন রাঙ্গুনিয়ার শত বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নতুন খেলায় মেতে ওঠেছে শরংকর।’

ওই মানববন্ধনে রাঙ্গুনিয়া কদমতলী মন্দিরের পুরোহিত মুক্তিযোদ্ধা রূপম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সৈয়দবাড়ি মন্দিরের পুরোহিত সুজন চক্রবর্তী, অভিনেত্রী অরুনা বিশ্বাস, সাবেক ছাত্রনেতা তড়িত কান্তি দে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের নেতা পঙ্কজ চৌধুরী, নির্মল দাশ, সুপায়ন চৌধুরী, শৈবাল চক্রবর্তী, লিপি চৌধুরী প্রমুখ।

একইদিন ১১ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শিলক বাজারে বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনঙ্কর থের’র গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ।

বাংলাধারা/এফএস/এএ

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ