ksrm-ads

২২ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

শিরীষতলায় যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»

আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। এরই মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। মেঘ সরিয়ে যেন মাঝে মাঝে সূর্যিমামা উঁকি মারে। কিন্তু লকডাউনের পর এই প্রথম শুক্রবার। তাই বাধ ভাঙ্গা জোয়ার মানুষের। চট্টগ্রামের সিআরবি’র শিরীষতলা যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিতালীর অন্যতম স্পট।

করোনার কারণে ১৯ দিন টানা লকডাউনে এবারের ঈদের আনন্দটাও মাটি হয়েছে। তাই শুক্রবার ছিল অপ্রত্যাশিত ভাবে পাওয়া একটি দিন। বিনোদনের অন্যতম দিন। ঘুরে ফিরে দেখার দিন। শুক্রবার ছুটির দিন। এ স্পটের সম্মুখে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় রেলের প্রধান অফিস যেমন বন্ধ থাকে, তেমনি আড্ডার সীমারেখাও বেড়ে যায়। তবে অন্যদিন দফতরটির আঙিনায় পর্যটকদের বাধা প্রদান করেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। কারণ জুটিরা অনেক সময় দল বেঁধে ব্রিটিশ হেরিটেজ খ্যাত সিআরবির মূল ফটকেও পৌঁছে যায় সেলফি তুলতে।

ডিএসএলআর ক্যামেরার সার্টার যেন একের পর এক পড়তে থাকে ছবি তোলায় ব্যস্তদের হাতে। ফলে দাপ্তরিক গাড়ি চলাচল যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি কর্মস্থলে আগতদেরও চক্ষু বিগড়িয়ে যায় জুটিদের অসামাজিক পদচারণায়। ফলে আরএনবি বাধ্য হয় সিআরবি গমন এবং বহির্গমনের ফটকে বহিরাগতদের বাদ সাধতে।

করোনার এই লগ্নে সকলকে সচেতন হতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এমনকি উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যথায় আইনের আওতায় এনে অমান্যকারীকের জরিমানার বিধানও করা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার ছুটির দিনে এই স্পটে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। কারও মাস্ক থুতনির নিচে আবার কারও কপালের উঠে গেছে মাস্ক। কেউবা পকেটে ভাজ করে রেখেছেন যাওয়ার সময় মুখে লাগাবেন এই ভেবে। তবে ভাববার বিষয় বিশাল এই জনসমাগমনের স্পটটি যেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না পড়ে। ভয়ংকার এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে বা এড়িয়ে যেতে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক হলেও শুক্রবার বিকেলের চেহারাটা ছিল ভিন্ন। অর্ধ সহস্র মানুষের সমাগমে সিআরবি শিরীষতলা স্পটটি টুইটুম্বুর হলেও দেখার কেউ নেই এমনকি বলারও কেউ নেই। ভাসমান ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আগতদের সবাই যেন অসচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন এই স্পটে।

কাক ডাকা ভোরে সূর্য যখন ঝিলিক মারে, ঠিক তখনই শতবর্ষী শিরীষ আর কড়ই গাছের ডালপালা আর পাতা ভেদ করে আলো প্রবেশ করে স্পটে। প্রকৃতির অপরূপ এই দৃশ্য দেখতে মনোরম পরিবেশে ছুটে আসেন শারীরিক সচেতন ব্যক্তিরা। এই স্পটটি শরীরচর্চা অন্যতম স্পট হিসেবে খ্যাত। কারণ পাহাড়ের পাদদেশে যেমন রয়েছে মসৃণ সড়ক, তেমনি পাহাড়ের চুড়ায় থাকা বাংলোগুলোতে উঠে গেছে শত ধাপের সিঁড়ি। আবার শিরীষতলার মাঠ থেকে কয়েকশ ফুট উপরে উঠে গেছে পিচঢালা সড়ক। কেউ উপরে উঠছেন আবার কেউবা নামছেন। শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে যেমন আগতরা পা জোড়া বুলিয়ে যাচ্ছেন তেমনি সিঁড়ি বেয়ে মাঝবয়সীরা শরীর গঠনে উপরে উঠে যাচ্ছেন আবার নামছেন। প্রাত ভ্রমণে আসা আগতদের মাঝে যেন আনন্দের বিলাস। শরীর গঠনের সকল উপাদানই রয়েছে এই স্পটে। বাতাস আর রৌদ্দুর যেন খেলা করছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই শিরীষতলায়।

প্রাতঃ ভ্রমণ শেষ হতে না হতেই কর্মস্থলে ছুটে আসেন সিআরবির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে শুক্র ও শনিবার এই চিত্রটি চোখে পড়ে না। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে পর্যটক শ্রেণি। তবে বন্ধের দিনে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জুটি ও সমবয়সীরা এই স্পটে আসে না। অন্যদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ ধরনের জুটিদের গুণে শেষ করা যাবে না।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম স্পট চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এর সম্মুখস্থ শিরীষতলা। চতুর্দিকে পাহাড়বেষ্টিতে এই স্পটটি ড্রোন ক্যামেরায় দেখলেই বোঝা যায়, প্রকৃতি তার সৌন্দর্য শতবর্ষী গাছ আর পাহাড়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে এই স্পটে। রেলের পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর এর সম্মুখে থাকা এই স্পটটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছায়াঘেরা। যেন স্পটটির উপর ছাতা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে শতবর্ষী শিরীষ গাছের ডালপালা আর পাতা দিয়ে। নিদারুণ এ স্পট দেখতে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে  যেমন ছুটে আসেন পর্যটক তেমনি আশপাশ এলাকার উৎসুকরাও আসা থেকে বিরত থাকেন না। কাক ডাকা ভোর থেকে সূর্যাস্ত গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও এ স্পটে মানুষের কমতি নেই। আড্ডা যেন শেষই হয় না। বাদাম ভাজা, মটরশুটি আর সিমের বিচি যেন আড্ডার অন্যতম উপাদান। শুধু তাই নয়, চটপটি, ফুসকা আর ঝাল মুড়িতেও সময় কাটাচ্ছে জুটিবাঁধা টিনেজরা।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন