ksrm-ads

২৮ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার

সম্পাদকীয়  »

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী আজ। প্রতি বছর এ দিনটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ পুরো জাতি দিনটি পালনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শিশু মুজিব। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুনের চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে। তাঁর জন্য আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। জন্মদিনে এই মহান নেতাকে আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো রাজনীতিকের সান্নিধ্যে আসেন। এ নেতাদের সাহচর্যে তিনি নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপর নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন মুজিব। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৮-এর আইয়ুব সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ১৯৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ হন তিনি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ষাটের দশকে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা।

১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে জানায় অকুণ্ঠ সমর্থন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনী বিজয়কে মেনে নেয়নি। বাঙালির এই নেতা কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দেশের আপামর জনগণ ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছে বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সেই সুযোগ বেশিদিন পাননি।

’৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত দিকে নিয়ে যাওয়ার পালা। ১৯৭৫-পরবর্তী ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ক্ষমতাসীন হয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের সরকার। শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ দিবসটি পালন শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় এসেই বিএনপি সরকার জাতীয় শিশু দিবস পালনের রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করে দেয়। তবে দলীয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে দিনটি পালন অব্যাহত ছিল। যাই হোক, ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন এবং অদ্যাবধি রয়েছেন। তখন থেকে ১৭ মার্চে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস।

বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন—আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিতে হবে আজকের শিশুদেরই। তাই শিশুরা যেন সৃজনশীল মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে- তিনি সব সময়ই সেটা চাইতেন। তাই জাতির জনকের জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই মহান নেতার জীবন ও আদর্শ অনুসরণে এ দেশের শিশুদের যথাযোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই হোক আজকে আমাদের অঙ্গীকার।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন