১২ জুলাই ২০২৫

শীতে করোনারোধে কক্সবাজারে ২০ শয্যার নতুন ইউনিট

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

শীত মৌসুমে করোনার প্রাদূর্ভাব বাড়ার আশংকায় তা প্রতিরোধ বা পর্যাপ্ত চিকিৎসার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে কক্সবাজারেও। পূর্বে চালু হওয়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হাই-ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)’র সাথে নতুন করে আরো ২০টি শয্যা সংযুক্ত করা হচ্ছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সহযোগিতায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় বর্ধিত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সদর হাসপাতালে এই ২০ শয্যার যাত্রা সোমবার (১৯ অক্টোবর) থেকে উদ্বোধন হয়েছে।

অতিরিক্ত ২০ শয্যার পাশাপাশি একটি নতুন ওয়ার্ডও তৈরি করে দিচ্ছে ইউএনএইচসিআর। সেই ওয়ার্ডে ১০ জন মেডিক্যাল ডক্টর, ১৫ জন স্টাফনার্স, একজন সিনিয়র নার্স, একজন ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল সুপারভাইজার, ৮ জন ক্লিনার ও ৮ জন ওয়ার্ড স্টাফসহ ৪৩ জন নতুন স্টাফের দায়িত্বও নিচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাটি। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষায়িত কোভিড-১৯ ক্লিনিকেও সেবা কার্যক্রম আরো নিবীড় করা হচ্ছে, এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সুপার ও সহকারী পরিচালক ডা. রফিক-উস-সালেহীন।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে সদর হাসপাতালে বর্ধিত স্বাস্থ্য সেবা উদ্বোধনকালে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির প্রধান স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সারওয়ার কমল, হাসপাতালের সুপার ডা. রফিক-উস-সালেহীন, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অনুপম বড়–য়া, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের হেলথ সেক্টর কো-অর্ডিনেটর ডা. শামমুদ্দোজা নয়ন, ইউএনএইচসিআর-এর সিনিয়র অপারেশনস কোঅর্ডিনেটর হিনাকো টোকিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় জানানো হয়, চলতি বছরের জুন মাসে ইউএনএইচসিআর-এর সহযোগিতায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রথম আইসিইউ ও এইচডিইউ উদ্বোধন করা হয়। গুরুতর রোগীদের জন্য নির্মিত আইসিইউ-তে বর্তমানে ১০টি বেড, ১১টি ভেন্টিলেটর ও ২টি পোর্টেবল ভেন্টিলেটর; এবং এইচডিইউ-তে আছে ৮টি শয্যা। নতুন করে যুক্ত হতে যাওয়া ২০টি শয্যার মাধ্যমে গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের আরও বেশি চিকিৎসা সেবা দেয়া যাবে।

অতিরিক্ত ২০ শয্যার বিপরীতে ডক্টর, স্টাফনার্স, সিনিয়র নার্স, ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল সুপারভাইজার, ক্লিনার ও ওয়ার্ড স্টাফসহ ৪৩ জন নতুন স্টাফও দিচ্ছে ইউএনএইচসিআর। সাথে দেয়া হচ্ছে বেড, দেয়াল থেকে সরবরাহকৃত অক্সিজেন, অক্সিজেন পাম্প, ইনফিউশন এন্ড সিরিঞ্জ পাম্প, এবং স্পেশালাইজড মেডিক্যাল পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই)-র মত বিশেষায়িত বিভিন্ন উপকরণ ও ঔষধ।

হাসপাতালের সুপার ডা. রফিক-উস-সালেহীন জানান, কক্সবাজার জেলায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য সকল মানবিক সংস্থা কাজ করছে। পুরো জেলায় ১৪টি সিভিয়ার একিউ টরেস্পিরেটরি ইনফেকশন আইসোলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার (সারিআইটিসি) গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে মাঝারি ও তীব্র ভাবে আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, গত জুন মাসের ২০ তারিখে আইসিইউ ও এইচডিইউ উদ্বোধনের পর থেকে বিশেষায়িত এ বিভাগে ১২৪ জন সংকটাপন্ন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মাঝে আছেন শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীও রয়েছে।

ডা. সালেহীনের মতে, করোনাকালের শুরুতে সবাই যখন আতঙ্কে উদ্বিগ্ন, তখন সবার আগে ইউএনএইচসিআর এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায়। কক্সবাজারের মত প্রান্তিক জেলায় এরকম চমৎকার সেবার যোগান পাওয়া সত্যি অকল্পনীয়।

ইউএনএইচসিআর-এর কক্সবাজারের সিনিয়র অপারেশনস কো-অর্ডিনেটর হিনাকো টোকি বলেন, করোনা ভাইরাস সারাবিশ্বে বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের অংশীদারিত্বের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ, সকলে যেন সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সেবা পায়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা একসাথে কাজ করে যাচ্ছি।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাংসদ সাইমুম সারওয়ার কমল বলেন, শরণার্থী ও স্থানীয়দের জন্য ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার সহায়তা কখনো ভুলার নয়। পারস্পরিক সহযোগিতা ও একসাথে কাজ করার সদিচ্ছা না থাকলে কেউই সামনে এগোতে পারেনা।

বাংলাধারা/এফএস/এএ

আরও পড়ুন