বাংলাধারা প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম নগরীর এমইএস কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামনেই এক শিক্ষিকাকে চড় ও অশ্লিল ভাষায় গালাগল করেছে ছাত্রলীগ নেতা। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দার। রাকিব ওই কলেজেই অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছেন।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজে এ ঘটনা ঘটে। হেনস্তার শিকার ওই শিক্ষিকার নাম ববি বড়ুয়া। তিনি নগরীর এমইএস কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা।
যদিও ঘটনার পর এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অভিযুক্ত রাকিব ওই শিক্ষিকার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ।
জানা গেছে, এমইএস কলেজে একটি গ্রুপের উপ-গ্রুপ হিসেবে তার নিজেরও একটি বলয় আছে। নিজের অনুসারী বাড়াতে প্রায় প্রতিদিনই ক্লাস চলাকালে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে একাদশ শ্রেণির নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করার আহ্বান জানান তিনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা ছাড়াও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় এমইএস কলেজের অন্যান্য ক্লাসগুলোতে ‘রাজনৈতিক দাওয়াত’ দেওয়া শেষে রাকিব আসেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা ববি বড়ুয়ার ক্লাসে। এই সময় নিজের সহযোগীদের নিয়ে রাকিব ক্লাসের ভেতর ঢুকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, রাকিবকে ক্লাস শেষে এসে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুরোধ জানান শিক্ষিকা ববি বড়ুয়া। কিন্তু তখনই ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জেদ ধরেন। পরে আবারও রাকিবকে অনুরোধ করা হলে ক্ষেপে যান তিনি। হাত নেড়ে ক্লাসভর্তি শিক্ষার্থীদের সামনেই রাকিব বলেন, ‘আপনি আমাকে চেনেন? আমি এখানেই কথা বলব।’
কিন্তু শিক্ষিকা ববি বড়ুয়া কোনোভাবেই ক্লাসের ব্যাঘাত ঘটাতে রাজি হননি। এরপর অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন রাকিব এবং আঙ্গুল নেড়ে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন। এর একপর্যায়ে রাকিব ওই শিক্ষিকাকে চড় মারেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ঘটনার পর বিষয়টি বাইরে জানাজানি ঠেকাতে ‘রাজনৈতিক মহল’ থেকে অনুরোধ আসে শিক্ষিকার কাছে। পরে অধ্যক্ষের রুমে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসসহ অভিযুক্ত রাকিব হায়দার শিক্ষিকা ববি বড়ুয়ার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেন।
এমন ঘটনার পর অপমানিত শিক্ষিকা ববি বড়ুয়া নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ এক দশক ধরে শিক্ষকতা করছি। এমন অপমানিত কখনও হইনি। একজন ছাত্র শিক্ষককে আঙুল নেড়ে কথা বলাটাও অপমানের। তবে আমি কামনা করি, আজ আমি যেমনভাবে অপমানিত হয়েছি। ওভাবে আর কখনও কোনো শিক্ষক যাতে অপমানিত না হন।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এই বিষয়ে কলেজটি অধ্যক্ষ এএনএম সরোয়ার আলম বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। পরে তারেক ও ইলিয়াসসহ রাকিবরা এসে ম্যাডামের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে। শিক্ষিকাকে মা ডেকে নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। বিষয়টি আমরা মীমাংসা করেছি। তবে একজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রের এমন আচরণ কাম্য না।’