ksrm-ads

১৬ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুই বই প্রত্যাহার

বাংলাধারা ডেস্ক »

পাঠ্যপুস্তকের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি। শুক্রবার এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি পাঠদান হতে প্রত্যাহার করা হল।’

পাশাপাশি ওই দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন বই’য়ের কয়েকটি অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েরও কয়েকটি অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে শিগগিরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে।

এই তিন বইয়ের যেসব অধ্যায় সংশোধন করা হবে, সেসব বাদে বাকি অধ্যায়ের পাঠদান অব্যাহত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। তবে কোন কোন অধ্যায় সংশোধন হবে তা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করা হয়নি।

জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে দুটো অংশ রয়েছে; আর বিজ্ঞান বইয়েও দুটো করে অংশ রয়েছে। একটা অনুশীলন বই, আরেকটা অনুসন্ধানী পাঠ। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ স্থগিত করা হয়েছে। আর ‘অনুশীলন বইয়ের’ কিছু কিছু অধ্যায়ের কিছু জায়গায় সংশোধন করে স্কুলগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

‘এগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল, তাই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

এ দিনই দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দুটি বই পড়ানো বন্ধের কথা জানান।

নীলকমল ইউনিয়নের ইশানবালা কাশেম উলমুল মাদ্রাসা মাঠে উঠান বৈঠকে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, কিছু জিনিস না থাকলেই ঠিক হইত বা এইটা অনেক বেশি লিখছে। আমরা বলছি, ঠিক আছে, নতুন বই আবার আমরা তৈরি করে দেব। আগামী বছর নতুন বানাইয়া দেব। ক্লাস সিক্সে একটা নতুন বানায় দেব, ক্লাস সেভেনে একটা নতুন বানায় দেব। সিক্সের একটা বই, সেভেনের একটা বই। ওই বিষয়ের দুইটা বই। একটা বই আপাতত পড়া বন্ধ থাকবে। ওইটা দরকার নাই পড়ার।’

পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতেই নতুন শিক্ষাক্রমে যাওয়ার কথা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যার অংশ হিসেবে এ বছর প্রাথমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক বইয়ের পাঠদান শুরু হয়েছে।

আগামী বছর তা শুরু হবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

চলতি বছর যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে তার পরীক্ষামূলক বই নিয়ে একটি ‘চিহ্নিত গোষ্ঠী’ অপপ্রচারে নেমেছে বলে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

এসব পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে যেসব লেখক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ-বিশেষজ্ঞরা জড়িত, তাদেরকে ‘কদর্য ভাষায়, কুৎসিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য ছাপানো পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংশোধনে এবং কেন ভুল হল তা তদন্তে ইতোমধ্যে দুই কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি, ভুল বা ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মাধ্যমিক) মো. আজিজ উদ্দিন।

শুক্রবার চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ইশানবালা কাশেম উলমুল মাদ্রাসা মাঠে উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

দীপু মনি ‍শুক্রবার বলেন, ‘ধর্ম একটা পবিত্র জিনিস। এইটা নিয়ে কি কেউ মিথ্যা কথা বলে? যারা এই মিথ্যাচার করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। বইয়ে কী আছে নিজেরা পড়ে দেখবেন। তারপরও আমরা কিছু কিছু ঠিক করছি। বইয়ে ইসলামবিরোধী কিছু নেই। তার পরও আমরা মানুষের কথা শুনি। মানুষের মনে কষ্ট লাগলে, দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলে আমরা সেইটারে জায়গা দিতে চাই। সেইটারেও সম্মান দিতে চাই। যে মিথ্যাচার করছে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। নৌকার যারা কর্মী, আওয়ামী লীগের যারা কর্মী তারা কখনও ইসলামবিরোধী কোনো কাজ করতে পারে না।’

সেখানে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক তালিকায় রয়েছে- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ, বিজ্ঞান অনুশীলন বই, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বই, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা, শিল্প ও সংস্কৃতি, ইসলাম শিক্ষা, হিন্দুধর্ম শিক্ষা, খিস্ট্রধর্ম শিক্ষা ও বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা।

হাইমচর উপজেলার অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এ এইচ এম আহসান উল্লাহ, জেলা পরিষদের সদস্য খোরশেদ আলম।

আরও পড়ুন