দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু , বোয়ালখালী »
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে অবস্থিত প্রাচীন বিদ্যাপীঠ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে সংকটের অন্ত নেই। জরাজীর্ণ শ্রেণি কক্ষে দুর্গন্ধসহ প্রায় এক ডজন সংকটে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, এ কলেজে রয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান)। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, স্নাতক পাস কোর্সে রয়েছে বিবিএস, বিএসসি, বিএ ও বিএসএস। সব মিলিয়ে বর্তমানে এ কলেজে ৫২৩৭ জন শিক্ষার্থী পড়ছেন। এর মধ্যে ২৬৯৬ জন ছাত্রী ও ২৫৪১ ছাত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ ভবন, কক্ষ সংকট, পানীয় জলের সংকট, শৌচাগার সংকট, শিক্ষক সংকট ও জনবল সংকটে ধুঁকছে ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী কলেজটি। যত্নের অভাবে নষ্ট হচ্ছে লাইব্রেরীর মূল্যবান দলিল ও বই। অবহেলায় পড়ে রয়েছে রসায়ন বিভাগের ল্যাব ও আইসিটি ল্যাবের যন্ত্রাংশ। শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার অযোগ্য দুইটি শৌচাগারে নেই পানি। টয়লেটের দুর্গন্ধের মধ্যে পাঠ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ দুইটি পুরাতন ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। ছাত্রাবাসগুলো ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গেছে বহুবছর আগে। নেই শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থাও। সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত কলেজে বেড়েছে বহিরাগতদের আনাগোনা। বেহাত হচ্ছে কলেজের জায়গা। চুরি হচ্ছে মূল্যবান সামগ্রী।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, দ্বিতল বিশিষ্ট জোড়াতালি দেওয়া দুই ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কক্ষ সংকটের কারণে কোনো এক শ্রেণির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে বন্ধ থাকে অন্যান্য শ্রেণির পাঠদান। শ্রেণি কক্ষের ছাদ বিমে ফাটল, ছুঁয়ে পড়ছে পানি। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে খাবার পানির মাত্র একটি টিউবয়েল। জরাজীর্ণ ব্যবহার অযোগ্য দুইটি টয়লেট ব্যবহার করেন শিক্ষার্থীরা। পানি ব্যবহারের সুযোগ নেই এসব টয়লেটে। ফলে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে শ্রেণি কক্ষেও থাকা দায়। পার্শ্ববর্তী এক বাসিন্দা তাদের পরিবারের জন্য খোলা টয়লেট নির্মাণ করেছেন কলেজ ভবনের পাশ ঘেঁষে। ফলে সেই টয়লেটের দুর্গন্ধও আসে শ্রেণি কক্ষে। এর মধ্যে বসে পাঠদান নেওয়া এক দূরহ বিষয়। নেই ছাত্র-ছাত্রীদের কমন রুম। তারপরও চলছে এ বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। খসে পড়া প্লাস্টার আর ভবন ধসের ঝুঁকি নিয়ে চলে অতিথি শিক্ষকদের পাঠদান।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন বরাদ্দ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। কিন্তু সেই ভবন এখনও দৃশ্যমান হয়নি।
স্নাতক পাস কোর্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আরফাত হোসেন তারেক বলেন, দূরদূরান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে যাতায়াত করেন। কলেজে ছাত্রাবাস, যানবাহনের সু-ব্যবস্থা ও ভালোমানের খাবারের সুবিধা না থাকায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী পাঠ নিতে আসতে চান না। খাবার পানির সংকট, টয়লেটের নাজুক পরিস্থিতি ও অরক্ষিত কলেজ সীমানায় বহিরাগতদের আনাগোনার কারণে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিলে আবারও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আশাবাদী।
প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনের বেশ কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. পার্থ প্রতীম ধর।
তিনি জানান, কলেজে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পদ রয়েছে দুই থেকে তিনটি। এর মধ্যে শিক্ষকের ৮টি পদ শূণ্য। ফলে এত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। নতুন করে আরও পদ সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। আইসিটি বিভাগে মাত্র একটি পদ। সে পদে নিযুক্ত প্রভাষক প্রশিক্ষণে থাকায় আইসিটির পাঠদান বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
অধ্যক্ষ বলেন, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ রয়েছে ১৬টি। এর বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। এ সংখ্যক জনবল নিয়ে কলেজ পরিচালনা করা অত্যন্ত কষ্টকর। ১৯.৪ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের রক্ষাবেক্ষণ করাটাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, কলেজের লাইব্রেরীতে ১৩ হাজার ৪৬৯টি বই রয়েছে। যা অত্যন্ত মূল্যবান দলিল। সংগৃহীত এসব বই ছাদ ছুঁয়ে পড়া পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক বই ইতোমধ্যে উই পোঁকা খেয়ে ফেলেছে। যতটুকু পারছি রক্ষা করার চেষ্টা করছি। লাইব্রেরীয়ান না থাকায় নিজে ও এমএলএসএস দিয়ে লাইব্রেরীর দেখাশোনা করছি।