পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দ প্রবেশ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবিতে আজ সকালে ঢাকা এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি নামের একটি সংগঠন। অন্যদিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একটি দল পাঠ্যবইয়ে গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে এনসিটিবির সামনে কর্মসূচি পালন করতে যান।
এসময় দুই পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচির চলাকালে আজ দুপুরে মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে হাতাহাতি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন।
আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে মানববন্ধনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ওই চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া লোকজন।
এদিকে এই হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল আদিবাসি শিক্ষার্থী। এ সময় পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী শব্দ পুনর্বহালের দাবি ও জানান তাঁরা।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ছিল তা আজ পুরোপুরি ব্যর্থ। বাংলাদেশের সব সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘আদিবাসীদের’ দাবিকে বারবার উপেক্ষা করেছে।
সুদীপ্ত চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘আদিবাসীদের’ অধিকারকে যথোপযুক্তভাবে সম্পৃক্ত করে এই রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক পাঠ্যবই থেকে আদিবাসী শব্দ পুনর্বহাল করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। অন্যদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিবাদ
এদিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি নামের সংগঠনের হামলায় বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকেরা মারাত্মক আহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যাসহ আরও অনেকেই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলা দেখতে পেতাম না। মিছিল কিংবা সমাবেশে হামলা পতিত নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগের কায়দার বহিঃপ্রকাশ।’
হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ফ্যাসিবাদ–উত্তর বাংলাদেশে নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে যারা হামলা করে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের অতিসত্বর আইনের আওতায় আনতে হবে। ভিডিও ফুটেজ তদন্ত করে এই হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নিন্দা
অপর দিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, পরিকল্পিতভাবে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলায় ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সেটলারদের কিছু শিক্ষার্থী ও তাঁদের পেছনে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে।’