বাংলাধারা প্রতিবেদন »
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী ও ব্যবসাবান্ধব নগর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা ব্যক্তিক বা একক উদ্যোগে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা। চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যে অবস্থান বা সংগঠনগত কাঠামোতে আমরা থাকি না কেন সবাইকে একই সূত্রে সোচ্চার হতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের পরিকল্পিত উন্নয়ন চাই। এজন্য তড়িঘড়ি করতে চাই না। যা কিছু করব তা স্থায়ীভাবে করব। এজন্য সবার পরামর্শ নেব এবং সর্বসম্মত ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিয়ে টেকসই উন্নয়ন করব। এতে ভালো মন্দের অংশীদার কেউ একা নয়, আমরা সবাই।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে মেয়র এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের অবস্থান পাল্টে যাবে এবং এর ইতিবাচক সুফল জাতীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়েই শুধু নয় বৈশ্বিক স্তরে ও বিস্তৃত হওয়ার অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। এ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও সম্পদ অর্জনের পরিধি বৃদ্ধিসহ শক্তিশালী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তর সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক পূর্বশর্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের সঙ্গে যে সব সেবা সংস্থা সম্পৃক্ত এবং মেগাপ্রকল্পগুলো যাদের হাতে রয়েছে তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আসছে না। এক্ষেত্রে সমন্বয়ের দায়িত্ব সঙ্গত কারণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রের ওপর বর্তায়। কিন্তু মেয়রের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সীমিত। এ অবস্থায় মেয়রের কর্তৃত্ব খাটানোর আইনগত অধিকার প্রয়োজন। চট্টগ্রামের উন্নয়নের সমন্বয় সভায় সেবা সংস্থার সঠিক প্রতিনিধিত্ব হয় না। অনেক সেবা সংস্থার প্রধানরা না এসে তাদের অধীন নামকাওয়াস্তে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দেন। এতে সমন্বয় সভার গুরুত্ব থাকে না এবং কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায় না।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম বলেন, করোনাকালে তৈরি পোশাক রফতানি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। আল্লাহর অশেষ রহমত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতা এবং সঠিক সিদ্ধান্তে এ শিল্পের চাকা সচল ছিল। এ খাতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনায় আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গার্মেন্টস শিল্পকে আওতার বাইরে রেখে সচল রেখেছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হতে দেননি। তাই আমরা স্বস্তিতে ছিলাম। বাংলাদেশ মানে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম ঘুরে দাঁড়ালে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। চট্টগ্রামে সরকারের মেগা প্রকল্প- বিশেষ করে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল, বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়ন হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বৈশ্বিক গুরুত্ব পাবে। গভীর সমুদ্রবন্দর একটি বহুমাত্রিক আন্তর্জাতিক টার্মিনালে রূপান্তরিত হবে।
চট্টগ্রাম শুধু রিজিওনাল কানেকটিভিটি নয়, ভারত-নেপাল-ভুটান-মিয়ানমার-লাওস-চীন পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল কানেকটিভিটির যোগসূত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। ফুলগাজী-মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে উপকূলবর্তী দেশের বৃহত্তম শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে অচিরেই গড়ে উঠতে যাচ্ছে। এ ছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামে চীন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ গড়ে তুলতে চায়। এই সম্ভাবনার আলোকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সক্ষমতার পরিধি বিস্তার খুবই জরুরি।
তিনি মেয়র ও চসিকের নির্বাচিত পরিষদকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, চট্টগ্রামকে জাতীয় স্বার্থে একটি আন্তর্জাতিক মানের নগরে রূপান্তরে সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি এএম চৌধুরী সেলিম, সহ-সভাপতি অঞ্জন শেখর দাশ, পরিচালক মোহাম্মদ আতিক, খন্দকার বেলায়েত হোসেন, এনামুল আজিজ চৌধুরী, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ, চসিকের কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক প্রমুখ।
বাংলাধারা/এফএস/এআর