চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ এবং আরেক শীর্ষ সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠেছে। আর এই অভিযোগের তীর শীর্ষ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা রিজাউর রহমানের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে ফাটল এখন প্রকাশ্যে। প্ল্যাটফর্মটির বেশ কয়েকজন সদস্যর অভিযোগের তীর একে অপরের দিকে। সম্প্রতি চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ নিয়েও আলোচনার জন্ম দেয়।
এদিকে, শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত ৮ টার দিকে নগরীর ওয়াসা মোড়ে ফেরদৌস টেইলারের ভবনের চার তলায় আবদুল হান্নান মাসউদ এবং আরেক শীর্ষ সমন্বয়ক রাসেল আহমেদকে আটকে রেখে হেনস্তার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ওই ভবনের আশেপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই সময় ওই ভবনের চারতলার সেই কক্ষে আরেক সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে ও দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দের কথা বলে গণমাধ্যমকে সরিয়ে দিতে চায়। এসময় ঘটনাস্থলে খুলশি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ পুলিশের বেশ কয়েকটি টিমকে ও দেখা যায়।
এদিকে এই হামলার ঘটনায় ৯টার দিকে রাসেল আহমেদসহ কয়েকজন সমন্বয়ক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। একপর্যায়ে সেখানেই রাফি-রিজাউর দলবলসহ উপস্থিত হন। এরপর উভয়পক্ষ জড়ায় হাতাহাতি-বিতণ্ডায়।
হামলার অভিযোগে রাসেলের সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল বলেন, ‘আজকের কর্মসূচি জিইসি মোড়ে এসে শেষ করি। পরবর্তীতে আমরা আগামী কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে আলাপের জন্য একটি অফিসে বসি। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রাফিকে ফোন দিয়ে পাচ্ছিলাম না। প্রায় ৩০ মিনিট পর সে দলবল নিয়ে আসে। সেখানে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা সমন্বয়ক রিজাউর তার নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্যাং ডট গ্যাংকে নিয়ে আসে। এসে আবদুল হান্নান মাসউদকে প্রশ্ন করেন তাকে কেন জানানো হয়নি। তিনি বলেছেন, হু আর ইউ? যেহেতু তিনি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তিনি সবাইকে চেনেন না এটাই স্বাভাবিক।’
রাসেল বলেন, ‘এরপর সমন্বয়ক রিজাউর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ডট গ্যাং সদস্য সাদিক আরমান, নিজামুদ্দিন তানভীর শরীফ, ওমর ফারুক সাগর, নাছির উদ্দিন, নওশাদ, ইফতি, মাহমুদ আলম, শফিকুল ইসলামসহ আরও অনেক উগ্র ছেলে-মেয়ে মাসউদ ভাই এবং আমাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। আমরা একটা রুমে আশ্রয় নিই। প্রায় একঘণ্টা সেখানে আমরা অবরুদ্ধ ছিলাম। তারা বারবার সেখানে উস্কানিমূলক স্লোগান দিচ্ছিল। একপর্যায়ে তারা সেখানে ভাঙচুর করা হয়। যার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে।’
প্রেসক্লাবে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রাসেল রিজাউর
রাসেলের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের একপর্যায়ে সেখানে হাজির হন সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, রিজাউর রহমান এবং ছাত্র আন্দোলনে আহত এক শিক্ষার্থী। এরপর রাফি গিয়ে রাসেলের পাশে বসেন এবং রিজাউর চেয়ারে বসার চেষ্টা করেন।
ওই সময় রাসেলের সাথে থাকা উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ‘হামলাকারীদের সাথে বসব না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এরই মধ্যে সেখানে রাফির পক্ষে থাকা আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। এ সময় উভয়পক্ষ একে অপরকে কটাক্ষ করে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সেখানে উভয়পক্ষের কয়েকজন হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিলে উভয়পক্ষ প্রেস ক্লাবের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সেখানেও তারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন।
হামলাকারী যেই হোক তার শাস্তির দাবী রাফির
এরপরই তার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিতে দেখা যায় রাসেলের অনুসারীদের। তিনি সেখান থেকে প্রেস ক্লাবের নিচে নেমে আসেন। উপস্থিত গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমাদের পূর্বঘোষিত কোনো কর্মসূচি ছিল না। হান্নান ভাই গতকাল রাতে আমাকে কল দিয়ে বলেন, তিনি আজ চট্টগ্রামে আসবেন। সেজন্য এ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করা হয়েছে। তিনটায় যেহেতু কর্মসূচি, সেহেতু আমার ক্যাম্পাস থেকে আসতে দেরি হয়েছে। আমার ওখানে যেতে চারটা বেজেছে। যে হামলার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমি জড়িত ছিলাম না। যে বা যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
‘আমার ও রিজাউরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সেগুলো কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আমরা কেউ থাকবো না। কিন্তু প্রমাণ করতে হবে। যে নোংরা রাজনীতি চলছে সেটার বন্ধ চাই।’
সম্প্রতি চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ওঠা সমন্বয়ক রিজাউর রহমান বলেন, ‘জিইসি মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা হয়েছে। এই হামলা কারা করেছে? যারাই করছে সে ফুটেজগুলো আমাদের কাছে আসতেছে। আমরা এটা দিব আপনাদের। তারা যে ডট গ্যাং বলে বলে আন্দোলনকারীদের মারার কালচার তৈরি করতেছে আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
উত্তপ্ত পরিস্থিতি যেভাবে নিয়ন্ত্রণে
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন প্রেসক্লাবে এ ঘটনার বিষয় মুহুর্তে ভাইরাল হয়ে যায়, এসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর একাধিক টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।